
শাহীন রহমান, পাবনা: হিমালয়ের অন্যতম টেকনিক্যাল ও চ্যালেঞ্জিং পর্বত ‘আমা দাবলাম’ (৬,৮১২ মিটার) সফলভাবে আরোহণ করেছেন পাবনার তরুণ পর্বতারোহী আহসানুজ্জামান তৌকির (২৭)। ৪ নভেম্বর নেপাল সময় দুপুর ১টায় তিনি ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে এই চূড়ায় পৌঁছান। রোপ ফোর-এর পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে পরিচালিত অভিযানে তার সহযাত্রী ছিলেন সংস্থাটির তরুণ পর্বতারোহী আবরারুল আমিন অর্ণব।
আমা দাবলাম খাড়া বরফ দেয়াল, গভীর ক্রেভাস, ঝুলন্ত বরফখণ্ড ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে টেকনিক্যাল পর্বতগুলোর একটি হিসেবে পরিচিত। এমন কঠিন চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানোকে দেশের পর্বতারোহণ ইতিহাসে গৌরবময় সংযোজন বলে মনে করা হচ্ছে।
চূড়ায় দাঁড়িয়ে অনুভূতি জানাতে গিয়ে তৌকির বলেন, আমা দাবলাম শুধু একটি পর্বত নয়, নিজেকে অতিক্রম করার যাত্রা। লাল-সবুজ পতাকা তুলেই মনে হয়েছে—এটি শুধু আমার নয়, সকল তরুণের স্বপ্নের সাফল্য।”
তিনি আরও জানান, তার এবারের অভিযান ছিল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের উদ্দেশে উৎসর্গ করা—
বিশ্বের প্রতিটি প্রাণই শক্তিশালী। আসুন নির্ভরশীল মানুষগুলোকে আরও ভালোবাসা ও সহযোগিতায় নতুন পৃথিবী গড়ে দিই।”
কঠিন পথে এগিয়ে গিয়ে অবশেষে শিখর জয়
গত ১২ অক্টোবর দেশ ছাড়েন তৌকির। ২২ অক্টোবর বেস ক্যাম্পে পৌঁছে শুরু করেন এক্লিমাটাইজেশন। ২৭ অক্টোবর থেকে হিমালয়ে তীব্র তুষারপাত শুরু হলে পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৯ অক্টোবরের সামিট পিছিয়ে যায়। ক্যাম্প-১ ও ক্যাম্প-২ এ তীব্র ঠান্ডা, ঝড়ো হাওয়া ও তুষারঝড়ের মধ্যে টিকে থাকার পর অবশেষে নতুন রুট ওপেন হলে ২ নভেম্বর শুরু হয় সামিট বিট।
৩ নভেম্বর ক্যাম্প-২ পেরিয়ে ৪ নভেম্বর ২২,৩৪৯ ফিট উচ্চতার আমা দাবলাম চূড়ায় পৌঁছান তৌকির। অতিরিক্ত বাতাস, ক্ষতিগ্রস্ত ফিক্সড রোপ ও আইস ফলকেও উপেক্ষা করে এই সাফল্য অর্জন করেন তিনি।
তরুণ এই পর্বতারোহীর পরবর্তী স্বপ্ন বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট এভারেস্ট জয় করা। যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ২০২৬ সালেই বাংলাদেশের পতাকা এভারেস্টের চূড়ায় তুলতে চান তিনি।
গত বছরের অক্টোবরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেপালের তিনটি ৬,০০০+ মিটার পর্বত (লবুচে, আইল্যান্ড পিক, মেরা পিক) সফলভাবে আরোহণ—তাও শেরপা সাপোর্ট ছাড়া।
২০২৩ সালের অক্টোবরে নাগা অর্জুন (৫০৭৬ মিটার) ও লবুচে পিক (৬১১৯ মিটার) আরোহণ করে লাল-সবুজ পতাকা ওড়ান।
আহসানুজ্জামান তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌরসদরের বালুচর মহল্লার বাসিন্দা। আকরাম হোসেন সাবু ও সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতির দুই ছেলের মধ্যে তিনি ছোট।
তিনি চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে এসএসসি, রাজশাহী পলিটেকনিক থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল ই তে বিএসসি সম্পন্ন করেন।