
হিমালয়ের তৃতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা-যার নামের মধ্যেই মিশে আছে রহস্য, রূপ আর রোমাঞ্চ। প্রতি বছর শীতের আগমনী বার্তায় পঞ্চগড় থেকে দেখা মেলে এই বরফে মোড়া মায়াবী পর্বতচূড়ার। কিন্তু এবারের শীতে এক অনন্য দৃশ্যের সাক্ষী হলো দেশের উত্তরাঞ্চল লালমনিরহাটের মানুষ। প্রথমবারের মতো হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ এলাকা থেকে স্পষ্ট দেখা গেল কাঞ্চনজঙ্ঘার শুভ্র শিখর।
বুধবার (৫ নভেম্বর) ভোরে, সূর্য ওঠার আগে থেকেই তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করে। মেঘমুক্ত আকাশে দূর দিগন্তে যখন আলোর রেখা ফুটে ওঠে, তখনই দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার সেই সাদা রুপালি মাথার। সূর্যের প্রথম কিরণ পড়তেই পর্বতের বরফঢাকা চূড়া সোনালি আভায় ঝলমল করে ওঠে। যেন প্রকৃতি নতুন দিনের সূচনা ঘোষণা করছে এক অপূর্ব সাজে।
গত কয়েকদিনের মেঘলা আবহাওয়ার পর টানা তিন দিন আকাশ একদম পরিষ্কার ছিল। এই সুযোগে তিস্তা ব্যারেজ, সানিয়াজান নদীর তীর এবং আশপাশের গ্রাম থেকে শত শত মানুষ ছুটে আসে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা পেতে। স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, এ দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই বাড়ছে দর্শনার্থীর সংখ্যা।
হাতীবান্ধার বাসিন্দা মেহেদী হাসান শুভ বলেন, “আমি প্রায় ১০ কিলোমিটার দূর থেকে এসেছি। মনে হচ্ছে বরফে মোড়া কোনো স্বপ্নের পাহাড় চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এমন দৃশ্য দেখা সত্যিই এক অনন্য অনুভূতি।”
আরেক দর্শনার্থী আরএম রিমন বলেন, “কাঞ্চনজঙ্ঘার এই দৃশ্য শীতের অল্প কিছু দিনের জন্য হলেও তিস্তাপাড়ের সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যদি পর্যটন অবকাঠামো আরও উন্নত করা যায়, তিস্তা ব্যারেজ আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।”
তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় স্থানীয় দোকানদাররাও বাড়তি ব্যবসায়িক সম্ভাবনা দেখছেন। তারা বলছেন, কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মেলে এমন দিনগুলোতে চা-কফি থেকে শুরু করে স্থানীয় খাবারের দোকানে ভিড় থাকে উপচে পড়া। এতে এলাকাবাসীর আয়ও বাড়ে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মনে করেন, পর্যটন অবকাঠামো উন্নয়ন করা গেলে এই অঞ্চল দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে পরিণত হতে পারে। তিস্তা ব্যারেজের সৌন্দর্য, নদীর বিশাল জলরাশি, আর দূরে হিমালয়ের শ্বেতশুভ্র দৃশ্য—সব মিলিয়ে এখানে এক অনন্য প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব।
প্রকৃতিপ্রেমীরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তন ও পরিষ্কার আকাশের কারণে হিমালয়ের দৃশ্য এবার আরও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে শীত মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের ঠান্ডা ও স্বচ্ছ আবহাওয়া এই ধরনের দৃশ্য উপভোগের উপযুক্ত সময়।
কাঞ্চনজঙ্ঘা মানেই হিমালয়ের মহিমা ও সৌন্দর্যের প্রতীক। বাংলাদেশের উত্তর সীমান্ত থেকে সেই সৌন্দর্য দেখা মানে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার বিরল সুযোগ। তিস্তা ব্যারেজের মানুষ এখন সেই স্বপ্নময় মুহূর্তের সাক্ষী। কেউ তা ক্যামেরাবন্দি করছেন, কেউবা শুধু চোখে ধারণ করছেন, হৃদয়ে রেখে দিচ্ছেন এক অনন্য স্মৃতি।