
সাগর মিয়া, রংপুরঃ
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দীর্ঘদিনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে জ্বালানি অপরাধীদের বিচার, ক্ষতিপূরণ আদায় এবং খাতে সুশাসন নিশ্চিতের দাবিতে রংপুরে মানববন্ধন করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রংপুর নগরীর প্রেসক্লাবের সামনে ক্যাব রংপুর জেলা শাখার উদ্যোগে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে ক্যাবের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি, ভোক্তা অধিকারকর্মী এবং সচেতন নাগরিকরা অংশ নেন। কর্মসূচি চলাকালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অনিয়মের প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান ও ব্যানার-ফেস্টুন প্রদর্শন করা হয়।
বক্তারা বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত কোনোভাবেই মুনাফাভিত্তিক ব্যবসা হতে পারে না। সরকারকে যৌথ মালিকানায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সরকারি মালিকানাধীন কোনো কোম্পানি কিংবা জনগণের সম্পত্তির শেয়ার ব্যক্তি খাতে হস্তান্তর বন্ধ করতে হবে। কারণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি জনগণের মৌলিক অধিকার—এটি লুটপাটের হাতিয়ার হতে পারে না।
তারা আরও বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেবায় ‘কস্ট প্লাস’ পদ্ধতি বাতিল করে সরকারকে কেবল ‘কস্ট বেসিসে’ মুনাফামুক্ত সেবা নিশ্চিত করতে হবে। উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে সাধারণ মানুষকে বারবার বাড়তি দামের বোঝা বহন করতে হচ্ছে।
মানববন্ধনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাথমিক জ্বালানি নির্ধারণে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনায় তরল জ্বালানির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কমিয়ে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে। তরল জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়বহুল হওয়ায় এর দায় শেষ পর্যন্ত সাধারণ ভোক্তার ওপর চাপানো হচ্ছে।
ক্যাব নেতারা জোর দিয়ে বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সংঘটিত সব ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের ‘জ্বালানি অপরাধী’ হিসেবে চিহ্নিত করে অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে জ্বালানি অপরাধীদের কাছ থেকে আদায়কৃত ক্ষতিপূরণের অর্থ দিয়ে একটি স্বতন্ত্র ‘এনার্জি প্রাইস স্ট্যাবিলাইজড ফান্ড’ গঠনের দাবি জানান তারা, যাতে ভবিষ্যতে জ্বালানি মূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি রোধ করা সম্ভব হয়।
বক্তারা আরও বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইন-২০০৩-এর মৌলিক সংস্কার অপরিহার্য। বর্তমান কাঠামোয় বিইআরসি ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
এছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো, জ্বালানি দক্ষতা ও সংরক্ষণ উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে বক্তারা বলেন, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উন্নয়নে কোনো ধরনের বৈষম্য রাখা যাবে না এবং বিদ্যুৎবাজারে সব বিনিয়োগকারীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
মানববন্ধনে আরও বলা হয়, নীতি ও সিদ্ধান্তের ফলে বিগত ১৫ বছরে সমগ্র জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায় বিপুল পরিমাণ অর্থ তসরুপ ও আত্মসাৎ হয়েছে। এই অর্থের প্রকৃত পরিমাণ নির্ধারণ করে যাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কর্তৃত্বে এসব অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে এবং যারা লাভবান হয়েছেন—তাদের সবার কাছ থেকে অর্থ ও ক্ষতিপূরণ আদায় করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
মানববন্ধন শেষে ক্যাব নেতৃবৃন্দ জানান, দাবি আদায়ে সরকার দ্রুত কার্যকর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নিলে আগামী দিনে আরও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।