
ভারতের জনপ্রিয় ও প্রবীণ কন্নড় অভিনেতা হরিশ রাই আর নেই। বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরুর কিডওই হাসপাতালে থাইরয়েড ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫০ বছর।
হরিশ রাই ছিলেন কন্নড় সিনেমার এমন এক নাম, যিনি খলনায়কের চরিত্রেও দর্শকের সহানুভূতি জাগাতে পারতেন। তার অসাধারণ অভিনয়, সংলাপ উচ্চারণের ভঙ্গি এবং চরিত্রে গভীরতা এনে দেওয়ার দক্ষতা তাঁকে শিল্পী হিসেবে অনন্য মর্যাদা দিয়েছে।
হরিশ রাইয়ের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র ছিল ১৯৯৫ সালের কাল্ট ক্লাসিক সিনেমা ‘ওম’-এর ডন রাই চরিত্র। সেই সময় থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন কন্নড় সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় মুখ।
পরে ‘কেজিএফ’ সিরিজে ‘চাচা’ চরিত্রে তাঁর উপস্থিতি দর্শকের মনে গভীর দাগ কাটে। যশ অভিনীত সেই সিনেমায় হরিশ রাইয়ের দৃঢ় অথচ মানবিক উপস্থিতি গল্পের ভারসাম্য রক্ষা করেছিল।
তিনি অভিনয় করেছেন আরও বহু প্রশংসিত চলচ্চিত্রে — ‘সামারা’, ‘জোড়িহাক্কি’, ‘রাজ বাহাদুর’, ‘বেঙ্গালুরু আন্ডারওয়ার্ল্ড’, ‘স্বয়ম্বরা’, ‘নাল্লা’— প্রতিটি সিনেমায় তাঁর অভিনয় শক্তি দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।
হরিশ রাই দীর্ঘদিন ধরে থাইরয়েড ক্যান্সারে ভুগছিলেন। চিকিৎসা চলছিল বেঙ্গালুরুর কিডওই হাসপাতালে। রোগটি তাঁর পেট ও উদর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ায় শেষ সময়ে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন।
মৃত্যুর আগে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার গোপী গৌড়ুর মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে হরিশ রাই চিকিৎসার জন্য সাহায্য চেয়ে আবেদন করেন। সেখানে তিনি বলেন,
আমি আবার অভিনয়ে ফিরতে চাই। অসুস্থ হলেও আশা হারাইনি।” তিনি জানান, প্রতিটি ইনজেকশনের দাম ছিল প্রায় ৩ লাখ ৫৫ হাজার রুপি, আর পুরো চিকিৎসার খরচ হতে পারত ৭০ লাখ রুপি।
‘যশ জানলে সাহায্য করবেই’ — শেষ বিশ্বাস
‘কেজিএফ’ তারকা যশ সম্পর্কে হরিশ রাই বলেছিলেন, যশ আগেও আমাকে সাহায্য করেছে। আমি তাকে বিরক্ত করতে চাই না। কিন্তু জানি, যদি সে আমার খবর পায়, সে অবশ্যই পাশে দাঁড়াবে। আমি আমার পরিবারকে বলেছি—যদি কিছু হয়, যেন যশকে জানায়।”
এই কথাগুলো এখন ভক্তদের কণ্ঠে বেদনার প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছে।
শোকের ছায়ায় কন্নড় ইন্ডাস্ট্রি হরিশ রাইয়ের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন কর্নাটকের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি. কে. শিবকুমার। তিনি বলেছেন—
কন্নড় সিনেমার প্রখ্যাত খলনায়ক হরিশ রাইয়ের মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। তাঁর মৃত্যুতে চলচ্চিত্র শিল্প এক অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়ল। তিনি ছিলেন অনবদ্য এক অভিনেতা।”
ভক্ত ও সহ-অভিনেতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন। অনেকেই লিখেছেন—ুতিনি ছিলেন এমন এক খলনায়ক, যাকে সবাই ভালোবাসত।”
হরিশ রাই রেখে গেছেন স্ত্রী ও দুই পুত্রকে। তাঁর জীবন শেষ হলেও রুপালি পর্দায় তাঁর তৈরি করা চরিত্রগুলো আজও জীবন্ত।
‘ওম’ এর ডন রাই বা ‘কেজিএফ’-এর চাচা — এই নামগুলো কন্নড় সিনেমার ইতিহাসে চিরকাল বেঁচে থাকবে।
একজন অভিনেতা চলে গেছেন, কিন্তু তাঁর তৈরি চরিত্রগুলো হয়ে থাকবে প্রজন্মের পর প্রজন্মের অনুপ্রেরণা।