
২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদ মারিয়া করিনা মাচাদোকে। মাচাদো, যিনি গত বছরের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি, নোবেল কমিটির মাধ্যমে এই স্বীকৃতি পেয়েছেন ভেনিজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রচার এবং একনায়কতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়সঙ্গত রূপান্তরের জন্য তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ।
শুক্রবার, নোবেল কমিটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ এক পোস্টে জানায়, “মাচাদোর অক্লান্ত পরিশ্রম এবং রাজনৈতিক সংগ্রাম ভেনিজুয়েলার জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তার নেতৃত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গি একটি শক্তিশালী উদাহরণ যে গণতন্ত্র ও শান্তি অর্জনের জন্য ধৈর্য, সাহস এবং আত্মত্যাগের প্রয়োজন।”
মাচাদো জন্মগ্রহণ করেন ভেনেজুয়েলার মধ্যাঞ্চলের এক সাধারণ পরিবারে। রাজনৈতিক জীবনের শুরু হয় স্থানীয় ছাত্র আন্দোলন ও মানবাধিকার সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে। ছোটবেলা থেকেই তার আগ্রহ ছিল সমাজে ন্যায় এবং মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায়।
২০০০-এর দশকে, ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক অঙ্গনে তার উপস্থিতি মূলত তরুণ ও নতুন প্রজন্মের ভোটারদের মধ্যে স্বীকৃতি পায়। তিনি নানান নাগরিক আন্দোলন, ভোটের অধিকার, রাজনৈতিক শিক্ষার প্রচারণা এবং করপোরেট ও সরকারের ত্রুটিমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যভাবে আন্দোলন করেন।
মাচাদোর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সবসময় গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধান কেন্দ্রীক। তিনি একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের পথ দেখিয়েছেন।
ভেনেজুয়েলার রাজনীতি গত দুই দশকে একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, তেলের দামে হঠাৎ পতন, রাজনৈতিক মতবিরোধ, একনায়কতন্ত্রের প্রভাব এবং আন্তর্জাতিক চাপ—সব মিলিয়ে দেশটির জনগণের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।
গত কয়েক বছরে, দেশটিতে বিরোধীদলীয় নেতা ও সাধারণ জনগণ বহুবার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধার কারণে মাচাদো একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে তার অবস্থান আরও দৃঢ় করেছেন। তার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক নীতির জন্য জনগণ তাকে সমর্থন জানিয়েছে।
নোবেল কমিটি মারিয়া করিনা মাচাদোর ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ রাজনীতিক প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মাচাদোর নেতৃত্ব শুধু ভেনেজুয়েলার জনগণের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক সমাজের জন্যও একটি শক্তিশালী বার্তা। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং নির্যাতনবিহীন সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে তার অবদান অনন্য।”
কমিটি আরও উল্লেখ করেছে যে, মাচাদোর কর্মজীবন এই প্রমাণ করে যে, ধৈর্য, সাহস ও ন্যায়ের প্রতি অঙ্গীকার থাকলেই একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ সম্ভব।