
আফ্রিকার দেশ সেনেগালে পুরুষদের পরিবার ও সমাজে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে উৎসাহিত করতে জাতিসংঘ চালু করেছে অনন্য একটি কর্মসূচি। এর নাম ‘স্কুল ফর হাসবেন্ড’। এই স্কুলে শেখানো হয় কীভাবে একজন পুরুষ হতে পারেন সহায়ক, দায়িত্বশীল এবং সচেতন স্বামী।
বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে জানা যায়, এমন এক ক্লাসে পড়াচ্ছিলেন ইমাম ইব্রাহীম ডায়ান। তিনি পুরুষদের বলছিলেন— গৃহস্থালি কাজে স্ত্রীকে সহযোগিতা করা শুধু মানবিক দায়িত্বই নয়, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও তা গুরুত্বপূর্ণ। “নবীজি (সা.) বলেছেন, যে পুরুষ তার স্ত্রী-সন্তানকে সাহায্য করে না, সে ভালো মুসলিম নয়,” বলেন তিনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে জানান, সন্তানদের গোসল করানো থেকে শুরু করে স্ত্রীকে নানাভাবে সহযোগিতা করেন তিনি। তার কথায় উপস্থিত ১৪ জন শিক্ষার্থী হাততালি দিয়ে সমর্থন জানান।
সেনেগালসহ পশ্চিম আফ্রিকার বহু দেশে পরিবার ও সমাজে পুরুষের কথাই শেষ কথা। নারীরা পরিবার পরিকল্পনা বা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বড় সিদ্ধান্তেও মতামত দেওয়ার সুযোগ পান না। এ বাস্তবতা বদলাতেই চালু হয়েছে এই বিশেষ কর্মসূচি। এর লক্ষ্য— স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও সামাজিক জীবনে ‘ইতিবাচক পুরুষত্ব’ (পজিটিভ ম্যাসকুলিনিটি) গড়ে তোলা।
ইমাম ইব্রাহীম জানান, তিনি ক্লাসে লিঙ্গ সমতা, প্রজনন স্বাস্থ্য, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও এইচআইভি–এইডসের মতো বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। শুক্রবারের খুতবায়ও এসব প্রসঙ্গ থাকে। অনেক নারী তাকে জানিয়েছেন, এসব খুতবা ও ক্লাসের পর তাদের স্বামীদের আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। এমনকি পুরুষরাও স্বীকার করেছেন, তারা এখন আরও ভালো স্বামী ও বাবা হতে চান।
২০১১ সাল থেকে সেনেগালে চালু হওয়া এ কর্মসূচি ইতোমধ্যে সরকারের নজর কেড়েছে। দেশটির নারী, পরিবার, লিঙ্গ ও শিশু সুরক্ষা মন্ত্রণালয় একে মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার কমানোর কার্যকর কৌশল হিসেবে বিবেচনা করছে। শুধু সেনেগাল নয়, নাইজার, টোগো ও বুরকিনা ফাসোতেও চলছে জাতিসংঘের এই উদ্যোগ। এসব দেশে নারীর স্বাস্থ্যসেবায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।
বর্তমানে সেনেগালে প্রায় ২০টি এমন স্কুল চালু আছে। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন প্রায় ৩০০ পুরুষ, যারা নিজ নিজ এলাকায় সচেতনতা ছড়িয়ে দিচ্ছেন।