
রম্য লেখক, আমিনুল হকঃ
আজ ১৭ অক্টোবর। বাউল সাধক ফকির লালন সাঁইয়ের তিরোধান দিবস। ১৮৯০ সালের এই দিনে পরলোকগমন করেন মানবতার এই মহাসাধক। তবে অগণিত ভক্তের হৃদয়ে তিনি এখনো বেঁচে আছেন এক আলোকিত মানবপ্রেমিক হিসেবে।
ফকির লালন সাঁইয়ের জন্মস্থান নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন তিনি ১৭৭৪ সালে ঝিনাইদহের হরিশপুর গ্রামে জন্মেছিলেন, আবার কেউ বলেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার ভাড়ারা গ্রামের এক হিন্দু পরিবারে তাঁর জন্ম। তবে জন্মস্থান নিয়ে মতভেদ থাকলেও, তিনি যে ছিলেন বাউল সাধক, মানবাদর্শে উদ্বুদ্ধ এক মরমী কবি—সে বিষয়ে দ্বিমত নেই।
লালনের দর্শন ছিল ধর্মীয় গোঁড়ামীর ঊর্ধ্বে। তাঁর বিশ্বাস ছিল- “মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।” মানবপ্রেমেই স্রষ্টার অস্তিত্ব খুঁজেছেন তিনি। তাঁর গান ছিল সেই দর্শনের বাহক। “খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়”, “সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে”, “তিন পাগলের হল মেলা নদে এসে” এমন অসংখ্য গান আজও প্রজন্মের পর প্রজন্মে অনুপ্রেরণা জোগায়।
কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ায় অবস্থিত লালন আখড়ায় ইতোমধ্যে ভক্তকুল সমবেত হয়েছেন। সাদা, লাল ও হলুদের পোশাকে, গলায় পুঁথির মালা আর হাতে এক তাঁরা নিয়ে তারা সমবেত কণ্ঠে গাইছেন সাঁইজির গান গানের ভেতর খুঁজছেন তাঁকে।
ফকির লালন সাঁইয়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল ছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। লালনের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন- “ডাকবো না, ডাকবো না, অমন করে বাইরে থেকে ডাকবো না, পারি যদি অন্তরে তাঁর ডাক পাঠাবো।”
ফকির লালন সাঁই আজ শারীরিকভাবে আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর দর্শন, কর্ম, হাজারো গান এবং ভক্তদের হৃদয়ে তিনি চিরজীবী। “বাড়ির পাশে আরশি নগর, আমি কেমনে সেথা যাইরে…” এই গানের মতোই, ভক্তরা আজও গানের সুরে খুঁজে ফেরেন তাঁদের প্রিয় সাঁইজিকে।