
রম্য লেখক, আমিনুল হকঃ
বয়স মাত্র ১৫ বছর। নাম মো. সিরাজুল ইসলাম, সবার কাছে সে পরিচিত ‘নবাব’ নামে।
এই বয়সে তার হাতে থাকার কথা বই, খাতা আর কলম। স্কুলের মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে হাসি-খেলা, গল্প-ঠাট্টায় কাটত সময়, এটাই ছিল তার স্বাভাবিক জীবন হওয়ার কথা। কিন্তু নিয়তি যেন লিখে রেখেছিল ভিন্ন এক গল্প।
কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙামারী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সোনাহাটবাজার। এক সময় এই বাজারে সোনা কেনাবেচার ধুম ছিল, তাই নাম হয়েছে সোনাহাট। বাজারের মাঝামাঝি অংশে একটি দোকান-“হানিফ স্টোর”। সকাল, দুপুর কিংবা রাত- প্রায় সব সময়ই দেখা মেলে এক কিশোরকে ব্যস্ত হাতে, হাসিমুখে। তিনিই সোনাহাটের নবাব।
যেভাবে কথা বলে, যেভাবে খরিদ্দারদের আপ্যায়ন করে, সবেতেই একটা ভদ্রতা, একটা মিষ্টি আচরণ। দোকানের মালিকরাও বলেন, “নবাব নামটা যেন ওর চরিত্রেরই প্রতিফলন।”
নবাবের বাড়ি শাহী বলদিয়া গ্রামে। বাবা মো. নুরুল ইসলাম। মা চলে গিয়েছিলেন নবাবের বয়স যখন মাত্র তিন মাস। দাদীর স্নেহ আর মমতায় বড় হয়েছে সে। কিন্তু জীবনের কঠিন বাস্তবতা খুব অল্প বয়সেই ঘিরে ফেলে তাকে।
২০১৮ সাল। বয়স তখন মাত্র আট বছর। অন্য বাচ্চারা স্কুলে যায়, আর নবাব তখন কর্মজীবনে পা রাখে। স্থানীয় হানিফ স্টোরে কর্মচারী হিসেবে চাকরি পায়, মাসিক বেতন ছয় হাজার টাকা। মাস শেষে বেতনের টাকা নিতে এসে হাজির হন বাবা নুরুল ইসলাম।
হানিফ স্টোরের স্বত্তাধিকারী শুভ রানা বলেন, “নবাব আমাদের দোকানের কর্মচারী হলেও এখন আমাদের পরিবারের সদস্য। ওর ভবিষ্যতের দায়িত্ব আমরা নিতে চাই।”
এই কথা শুনে নবাব চুপ হয়ে যায়। কিছু বলে না। তবে তার চোখে ভেসে ওঠে এক অদৃশ্য স্বপ্ন, একদিন হয়তো তারও জীবন বদলাবে, হয়তো সে আবার স্কুলে ফিরবে!