
রম্য লেখক, আমিনুল হকঃ
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) উপজেলার জগতলা--নদী বিধৌত এক গ্রাম, অথচ স্মৃতির ভান্ডার যেন বিশাল। যমুনার কোল ঘেঁষে থাকা এই গ্রামে কেটেছে আমার সোনা ঝরা শৈশব। নদীর স্রোতের মতোই বয়ে গেছে দিন।
সকাল বেলা স্কুলে, বিকেলে মাঠে--এটাই ছিল আমাদের সময় জগতলার শিশুদের জীবনের ছন্দ। দাঁড়িয়াবানদা, গোললাছুট, দড়িলাফ আর লাঠিখেলা-- প্রতিটি খেলায় ছিল হাসি, আনন্দ আর প্রতিযোগিতার উত্তেজনা। সূর্য ঢলে পড়লে মাঠে ভেসে উঠত বাচ্চাদের কোলাহল। বড়রাও মেতে উঠতেন সেই আনন্দে।
বর্ষা এলেই জগতলা যেন উত্সবের গ্রাম হয়ে উঠত। নদীর ঢেউয়ে দুলত ডিঙি নৌকা, শুরু হতো নৌকা বাইচ। তীরে হাজারো মানুষের ভিড়, ঢাকের তালে উল্লাস আর জয়ের চিত্কারে মুখোর থাকতো নদীর পার। সেই দৃশ্য আজও গ্রামের মানুষের চোখে ভাসে।
গ্রামের সাংস্কৃতিক প্রান ছিলেন আফজাল ফকির। তাঁর লাঠিখেলায় যেমন ছিল শক্তি, তেমনি ছিল শিল্পের ছোঁয়া। পাশে থাকতেন সাজু, আফসার ভাইয়েরা-- তাঁদের জারি সারি গানের সুরে মুগ্ধ হতেন গ্রামের মানুষ। চাঁদের আলোয় নদীর তীরে বসে গান গাইতেন তাঁরা-- যেন জগতলাতেই তখন জীবন্ত হয়ে উঠত গ্রামবাংলার লোকসংস্কৃতি।
সময় বদলেছে, মানুষ ছুটছে শহরের দিকে। কিন্তু মন যখন ফিরে যায় অতীতে, তখন সেই নদী, সেই মাঠ, সেই গানের সুর আবার ভেসে আসে কানে। জগতলা আজ শুধু এক গ্রামের নাম নয়, এটি এক শৈশবের, এক স্মৃতির, এক অমলিন সময়ের নাম ।
জগতলার মাটি, জগতলার মানুষ-- এখনও তাঁরা আমার জীবনের সবচেয়ে মধুর স্মৃতি।
নদীর স্রোতের মতোই বয়ে যায় সময়, কিন্তু জগতলার সোনালি দিনের স্মৃতি রয়ে যাবে চিরকাল--মনে প্রানে এক নদী বিধৌত শৈশবের নাম হিসাবে।