
রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার একটি আবাসিক এলাকায় একই পরিবারের চারজনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্থানীয়দের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহগুলো উদ্ধার করে। নিহতরা হলেন— আব্দুল করিম (৪৫), তার স্ত্রী শারমিন আক্তার (৩৮), ছেলে হাসান (১২) ও মেয়ে হুমায়রা (৮)। তারা দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সকালে দীর্ঘ সময় ধরে করিমের বাসার দরজা বন্ধ থাকায় প্রতিবেশীরা সন্দেহ করেন। ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে তারা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে চারজনের মরদেহ দেখতে পায়। নিহতদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে কি না, তা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ফ্ল্যাটের ভেতরে রক্তের দাগ দেখা গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে সিআইডি ও পিবিআই’র ক্রাইম সিন ইউনিট কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে পারিবারিক কলহ বা আর্থিক সংকটকে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, তা নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও তদন্তের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করেছি। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডও হতে পারে। তবে সব দিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত চলছে।”
এলাকাবাসীর অনেকেই জানিয়েছেন, করিমের ব্যবসা কয়েক মাস ধরে ভালো যাচ্ছিল না। তিনি সম্প্রতি বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। এছাড়া পারিবারিক কলহের কথাও তারা শুনেছেন। তবে ঘটনার দিন রাতে বাসা থেকে কোনো ধরনের শব্দ বা চিৎকার শোনেননি কেউ।
মরদেহগুলো উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. মো. কামরুল হাসান জানান, ময়নাতদন্ত শেষে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রাতের কোনো এক সময় চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
ঘটনার পর থেকে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একসঙ্গে চারটি জানাজা ও দাফনের প্রস্তুতি চলছে। স্থানীয় কাউন্সিলর জানিয়েছেন, এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা রাজশাহীতে বিরল এবং সবাই গভীরভাবে শোকাহত।
পুলিশ জানিয়েছে, পরিবারের আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং তাদের বক্তব্যও নেওয়া হবে। পাশাপাশি ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।
এই মর্মান্তিক ঘটনার খবরে রাজশাহীজুড়ে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা চলছে এবং সাধারণ মানুষ দ্রুত ঘটনার রহস্য উদঘাটনের দাবি জানাচ্ছেন।