শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি:
প্রায় চার দশক ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের হুসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু শিক্ষার এই আলোকবর্তিকার পথটাই এখন হয়ে উঠেছে ভয়ংকর। বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার একমাত্র প্রবেশপথটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রতিনিয়ত আতঙ্ক নিয়ে স্কুলে যেতে হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে রয়েছে দুটি বড় ও গভীর পুকুর। এই দুই পুকুরের মাঝখানের একমাত্র সরু মাটির পাড় দিয়েই অন্তত ১২৫ জন শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয়। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, পুকুর দুটির গভীরতা প্রায় ৮ থেকে ১০ ফুট। বর্ষাকাল বা সামান্য বৃষ্টিতেই পাড়টি পিচ্ছিল ও কাদায় পরিণত হয়। পাড় ভেঙে যাওয়ায় রাস্তা আরও সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে—যেখানে পাশাপাশি দু’জনের হাঁটা প্রায় অসম্ভব।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ওসমান গণি জানায়,
‘স্কুলে আসার সময় খুব ভয় লাগে। রাস্তাটা অনেক চিকন, একটু এদিক-ওদিক হলেই পুকুরে পড়ে যেতে পারি। বর্ষাকালে তো আসাই কঠিন হয়ে যায়।’
চতুর্থ শ্রেণির ফাতেমা খাতুন ও তৃতীয় শ্রেণির রিফাত হোসেন জানায়, ‘পুকুরের পাড়টা অনেক উঁচু ও খাড়া। অভ্যাস হয়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু ভয় থেকেই যায়।’
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারিহা খাতুন ও জান্নাত ইসলাম বলে, এই পথ পার হতে তাদের প্রচণ্ড কষ্ট হয় এবং সব সময় ভয় কাজ করে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. রুবেল বলেন, ‘এই রাস্তাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় বাচ্চারা পুকুরে পড়ে যায়। বর্ষাকালে ভয়েই তারা স্কুলে যেতে চায় না। যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
পুকুরের মালিক আব্দুস সাত্তার জানান, ‘বিদ্যালয় স্থাপনের আগেই এখানে পুকুর ও জঙ্গল ছিল। উত্তরের পুকুরটি ১ একর ৩৯ শতক এবং অন্যটি ৮২ শতক। গভীরতা ৮–১০ ফুট। স্কুলের নিজস্ব রাস্তা না থাকায় প্রশাসন বা স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি গাইড ওয়াল নির্মাণ বা রাস্তা প্রশস্ত করতে চায়, আমি সম্পূর্ণ সহযোগিতা করব।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খাতুন বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তার কারণে অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত স্কুলে আসতে চায় না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’
শেরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাহিদা সুলতানা জানান, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দ্রুত সরেজমিনে বিদ্যালয় পরিদর্শন করা হবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গাইড ওয়াল নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।’
এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ আহমেদ বলেন, ‘পরিস্থিতি যাচাইয়ের জন্য প্রতিনিধি পাঠানো হবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’


