ডেস্ক রিপোর্টঃ
নওগাঁয় পৌরসভাজুড়ে বেড়েছে মশার দাপট। এ যেন মশার রাজত্ব; ঘরে-বাইরে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রত্যেক মানুষ। মশার দাপটের সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত তিন মাসে জেলায় ২৯২জন ডেঙ্গু আক্রন্ত হয়েছে। এতে ডেঙ্গু আতঙ্ক বাড়ছে স্থানীয়দের মাঝে।
পৌরবাসীর অভিযোগ, পৌরকর বাড়ানো হলেও সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয়নি। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় মশা নিধনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। জনসচেতনতায় নেই প্রচারণাও। যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ, ড্রেনের পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়াও নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রমের অভাবে পৌরসভাজুড়ে বেড়েছে মশার দাপট। এদিকে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে গত দুই বছর থেকে পৌরসভায় মশক নিধনের বরাদ্দ নেই তাদের।
সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে- চলতি বছরের অক্টোবর মাসে ১২০ জন, সেপ্টেম্বর ১১৬ জন ও নভেম্বর মাসে ৫৬ জন ডেঙ্গু আক্রন্ত হয়েছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত সংখ্যা ৩২১ জন। তবে কোন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
সরেজমিনে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পৌর এলাকার অলিগলিতে পর্যাপ্ত ডাষ্টবিন না থাকায় যত্রতত্র বাসা-বাড়ির ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে। অনেক এলাকায় ঝোপঝাড়-জঙ্গলে ভরপুর। পৌরসভার ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে ময়লা-আবর্জনা জমে আছে। অনেক এলাকার ড্রেন লাইনের ঢাকনা নেই। ড্রেনগুলোতে জমে থাকা পানি থেকে জন্ম নিচ্ছে মশা। এতে বাড়ছে মশার উপদ্রব।
শহরের উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ড্রেন, খাল, ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়গুলো মশার প্রজননকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু এসবে মশার প্রজনন বন্ধে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তা নেওয়া হচ্ছে না। অথচ বাড়ানো হয়েছে পৌরকর। পৌর কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।’
হাসপাতাল রোড়ের বাসিন্দা ইউনুস মন্ডল বলেন, ‘সন্ধ্যার পর দোকানে চা খেতে বসলে ঝাঁকে-ঝাঁকে মশা ধরে। সারাদেশেই ডেঙ্গুর ভয়াবহ অবস্থা। অথচ পৌর কর্তৃপক্ষ মশা নিধনের কোন কার্যক্রম নেই। কখন স্প্রে করে এমন দৃশ্য চোখে পড়েনা। এইভাবে চলতে থাকলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা আছে। এজন্য দ্রুত মশা নিধনে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া দাবি তার।’

বাঙ্গাবাড়িয়া এলাকার গৃহিণী সুমি আক্তার বলেন, ‘মশার যন্ত্রণায় বাড়িতে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর মশার এত উৎপাত যা বলে প্রকাশ করার মতো না। কয়েলে ধোঁয়া বা সন্ধ্যার আগে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখলেও মশা কমে না। মশার জ্বালা থেকে ও ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করতে কর্তৃপক্ষের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।’
নওগাঁ পৌরসভা প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘গত দুই বছর থেকে পৌরসভায় মশক নিধনের বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে পৌর রাজস্ব আয় থেকে মশক নিধনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। পৌরসভার প্রতিটি মহল্লায় পর্যায়ক্রমে মশক নিধনের কাজ করা হয়। তবে ফগার মেশিনের চেয়ে হ্যান্ড স্প্রে মেশিনে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। হ্যান্ড স্প্রে দিয়ে মশার লাভা ধ্বংস করা হচ্ছে।’
সিভিল সার্জন ডা. মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগ থেকে রক্ষা পেতে মশক নিধন গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মাঝে সচেতনা বৃদ্ধি করার জন্য কাজ করা হচ্ছে। বাসাবাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাসহ সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শও দেন এ কর্মকর্তা।’


