বিশেষ প্রতিবেদকঃ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য গত ৩ নভেম্বর ২৩৭টি আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছিল বিএনপি। প্রার্থী ঘোষণা না করা ৬৩টি আসনের মধ্যে নওগাঁ-৫ (নওগাঁ সদর) আসনও ছিল। এর পর থেকে এই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী কে হচ্ছেন তা নিয়ে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছিল।
অবশেষে সেই জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নওগাঁ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির মহাসচিব মিজা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে ৩৬টি আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। ঘোষিত ৩৬টি আসনের মধ্যে নওগাঁ-৫ আসনে জাহিদুল ইসলাম ধলুর নাম ঘোষণা করা হয়।
নওগাঁ-৫ আসনের নির্বাচনী এলাকা হল নওগাঁ সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। জাহিদুল ইসলাম ধলু ২০১৮ সালে এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। নওগাঁ জেলা বিএনপির দুইবারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম স্থানীয় বিএনপির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী শাসনামলে আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন বিএনপির এই নেতা। হামলা-মামলাসহ বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকারও হন তিনি।ত্যাগী এই নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ায় চাঙা হয়ে উঠেছে নওগাঁ-৫ আসনের বিএনপির নেতাকর্মীরা।
মনোনয়ন পাওয়ার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সর্বপ্রথম মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডের নেতাদের প্রতি। আমি দীর্ঘ সময় ধরে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে রাজনীতি করে যাচ্ছি। আসন্ন নির্বাচনে দলের সকল নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ধানের শীষকে জয়ী করব ইনশাআল্ল্হা।’
তিনি আরও বলেন, ‘মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় আরও অনেকে চেষ্টা করেছেন, তবে দল আমাকে দিয়েছে। কারো সঙ্গে কোনো ভেদাভেদ নেই, আমরা একসাথে কাজ করবো।’
এদিকে গতকাল বিকেলে নওগাঁ-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জাহিদুল ইসলাম ধলুর নাম ঘোষণার পর থেকেই তাঁর অনুসারী-নেতাকর্মীদের উল্লাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
জাহিদুল ইসলাম ধলুর অনুসারী নেতাকর্মীরা বলছেন, জাহিদুল ইসলাম চার দশকের বেশি সময় ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। একেবারে তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতৃত্ব তিনি। দলকে সংগঠিত করতে দীর্ঘদিন ভূমিকা রাখলেও তিনি এতোদিন জনপ্রতিনিধিদ হননি। এই আসনে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয় একজন মুখ। তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার মধ্য দিয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে মনোনীত করেছে বিএনপি। এখানে তাঁকে ব্যতীত অন্য কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে এখানে ধানের শীষকে বিজয়ী করা কঠিন হয়ে যেত।
জাহিদুল ইসলাম ধলু অনুসারী হিসেবে পরিচিত নওগাঁ পৌর যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক শামীনূর রহমান বলেন, ‘মাঠের রাজনীতির জয় হয়েছে। বিগত ১৭ বছর জাহিদুল ইসলাম আন্দোলন সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এজন্য তাঁকে নির্যাতন সইতে হয়েছে। এই মনোনয়নের মাধ্যমে একজন ত্যাগী নেতার মূল্যায়ন হয়েছে।’
জাহিদুল ইসলাম ছাড়াও এই আসনে বিএনপি মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সমবায়বিষয়ক সম্পাদক নজমুল হক সনি, জেলা বিএনপির সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু, সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান তুহিন, সাবেক ছাত্র নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান ডাবলু ও জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আরও ৩৬টি আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর আগে ২৩৭ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়।
নওগাঁ-৫ সহ যে ৩৬ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে- সিরাজগঞ্জ-১ আসনে সেলিম রেজা, যশোর-৫ আসনে এম ইকবাল হোসেন, নড়াইল-২ আসনে মনিরুল ইসলাম, খুলনা-১ আসনে আমির এজাজ খান, পটুয়াখালী-২ আসনে মোহাম্মদ শহিদুল আলম তালুকদার, বরিশাল-৩ আসনে জয়নাল আবেদীন ও ঝালকাঠি-১ আসনে রফিকুল ইসলাম জামাল বিএনপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
টাঙ্গাইল-৫ আসনে সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ময়মনসিংহ-৪ আসনে মো. আবু ওয়াহাব আখন্দ ওয়ালিদ, কিশোরগঞ্জ-১ আসনে মো. মাজহারুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল, মানিকগঞ্জ-১ আসনে এস এ জিন্নাহ কবির ও মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে মো. কামরুজ্জামান বিএনপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
ঢাকা-৭ আসনে হামিদুর রহমান, ঢাকা-৯ আসনে হাবিবুর রশিদ, ঢাকা-১০ আসনে শেখ রবিউল আলম, ঢাকা-১৮ আসনে এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, গাজীপুর-১ আসনে মো. মুজিবুর রহমান, রাজবাড়ী-২ আসনে মো. হারুনুর রশিদ, ফরিদপুর-১ আসনে খন্দোকার নাসিরুল ইসলাম, মাদারীপুর-১ আসনে নাদিয়া আক্তার ও মাদারীপুর-২ আসনে জাহান্দার আলী খান বিএনপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
ঠাকুরগাঁও-২ আসনে আব্দুস সালাম, দিনাজপুর-৫ আসনে এ কে এম কামরুজ্জামান, নওগাঁ-৫ জাহিদুল ইসলাম ধলু ও নাটোর-৩ আসনে মো. আনোয়ারুল ইসলাম বিএনপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
সুনামগঞ্জ-২ আসনে নাসির হোসেন চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-৪ আসনে নুরুল ইসলাম, সিলেট-৪ আসনে আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ-১ আসনে রেজা কিবরিয়া, কুমিল্লা-২ আসনে মো. সেলিম ভুঁইয়া, চট্টগ্রাম-৩ আসনে মোস্তফা কামাল পাশা, চট্টগ্রাম-৬ আসনে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৯ আসনে মো. আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে নাজমুল মোস্তফা আমিন, কক্সবাজার-২ আসনে আলমগীর মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ বিএনপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।


