ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি:
নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার মেধাবী শিক্ষার্থী মোছা. মাছুমা আক্তার। ছোট থেকে তার অনেক ইচ্ছে ছিল একজন চিকিৎসক হবার। চিকিৎসক পেশায় এসে অসহায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সেবায় কাজ করতে চান সদ্য মেডিকেল ভর্তির সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থী মাছুমা। মেয়ের স্বপ্ন পূরণে বট গাছের ছাঁয়ার মতো সবসময় পাশে ছিলেন রাজমিস্ত্রি পিতা মতিয়ার রহমান। মেয়ের ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণে বাবার চেষ্টার কোন কমতি ছিলনা। কিন্তু অর্থাভাবে থমকে রয়েছে মাছুমার মেডিকেল ভর্তির স্বপ্ন। মেয়ের ডাক্তার হবার স্বপ্ন পূরণ করতে অভাবের সংসারে দাঁড়িয়ে পরিবারের শেষ সম্বল ২৫ শতাংশ জমি বিক্রয়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন মাছুমার পিতা মতিয়ার রহমান।
মাছুমা আক্তার উপজেলার ধামইরহাট ইউনিয়নের শিবরামপুর এলাকার মতিয়ার রহমানের বড় মেয়ে। সে হরিতকীডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২২ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে মাধ্যমিক পাস করেন এবং ১২৬৭ নম্বর পেয়ে থানা পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। পরে ২০২৪ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। মাছুমার মায়ের নাম মোসা. রিক্তা বেগম। মতিয়ার ও রিক্তা দম্পতির ঘরে দুটো মেয়ে সন্তান। মাছুমা আক্তার পরিবারের বড় মেয়ে। এ বছরে মাছুমা আক্তার দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
মাছুমা বলেন, আমার ছোটবেলা থেকে অনেক ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হবার। এইবারে আমার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আমার বাবা ও মা সবসময় চাইতেন আমি যেন বড় হয়ে একজন চিকিৎসক হিসেবে অসহায় মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে পারি। একজন নি¤œবিত্ত পরিবার থেকে নিজের স্বপ্ন কতদুর পূরণ করতে পারব তা আমার জানা নেই। আমি দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে সুযোগ পেয়েছি। সেখানে ৩০ ডিসেম্বর থেকে আগামি বছরের ৬জানুয়ারি মধ্যে ভর্তির সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে চিকিৎসক হয়ে দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সেবা করতে চাই। সকলের নিকট দোয়া চেয়েছেন তিনি।
মাছুমার বাবা মতিয়ার রহমান জানান, আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করে যা ইনকাম করি তা দিয়ে নিজের সংসার চালিয়ে থাকি। দুই মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে বর্তমান বাজারে এত স্বল্প আয় দিয়ে সংসার চালানো অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। আমার মেয়ে ছোটবেলা থেকে অনেক মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। আমরা মেয়ের এমন সফলতা দেখে খুবই আনন্দিত। একজন পিতা হিসেবে আমি আমার জমি বিক্রয় করে হলেও মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। স্কুল কলেজে লেখাপড়া করা অবস্থায় আমার মেয়ের লেখাপড়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে আমি সহযোগীতা পেয়েছিলাম।
হরিতকীডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উম্মে কুলসুম জানান, মাছুমা আক্তার আমাদের বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদের খুবই পছন্দের একজন শিক্ষার্থী ছিলেন। সে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে বিদ্যালয়ের সুনাম বয়ে এনেছিল। তার মেডিকেল ভর্তির সুযোগ পাওয়াতে আমরা বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকরা খুবই আনন্দিত। আগামি জীবনে আমরা তার সাফল্য কামনা করছি।


