
নওগাঁ কলেজে
ছাত্রদল নেতার ওপর হামলার অভিযোগ, কলেজ গেটে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ
নওগাঁ সরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষে ভর্তিতে অতিরিক্ত ফি আদায়ের প্রতিবাদ করায় ছাত্রদলের এক নেতাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রদলের ওই নেতাকে মারধরের প্রতিবাদে কলেজের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা হামলাকারীদের বিচার ও ভর্তি ফি কমানোর দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
হামলার শিকার ওই ছাত্রদল নেতার নাম জুনায়েদ হোসেন ওরফে জুন। তিনি নওগাঁ সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক।
আজ দুপুর ১২টার দিকে নওগাঁ সরকারি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থী কলেজের প্রধান ফটকে তালা ঝুঁলিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়ে আছেন। এ সময় তাঁরা জুনায়েদের ওপর হামলার ঘটনার বিচার দাবি ও ভর্তি কমানোর দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। আন্দোলনকারীদের মধ্যে ছাত্রদল নেতা জুনায়েদ হোসেনও ছিলেন। তাঁর টি শার্টের সামনের অংশে ছেড়া দেখতে পাওয়া যায়।
জুনায়েদ হোসেনের বলেন, ‘আজ সকাল ৯টার দিকে কলেজের প্রশাসন ভবনের যে কক্ষে উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে সেখানে যাই। সেখানে গিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিস স্টাফদের উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষে ভর্তিতে অতিরিক্ত ফি আদায় নিয়ে একটা যৌক্তিক সমাধান না হওয়ায় পর্যন্ত ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার কথা বলি। এ সময় কলেজের কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে আমার বাকবিত-া হয়। একপর্যায়ে মাইকে ঘোষণা দিয়ে কলেজের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী আমার ওপর হামলা চালায়। আমি এ ঘটনায় মামলা করব। যাঁরা আমার ওপর হামলা চালিয়েছে তাঁদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষে ভর্তিতে অতিরিক্ত ফি আদায় এবং জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ¯œাতক দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার ফরম পূরণের ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছেন। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের দাবিকে তোয়াক্কা না করে অতিরিক্ত ফি আদায় করে উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষে ভর্তি ও ¯œাতক দ্বিতীয় বর্ষের ফরম পূরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, অন্যান্য কলেজের চেয়ে এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেশি ফি নেওয়া হচ্ছে। নওগাঁ শহরেই আরেকটি সুনামধন্য কলেজ বিএমসি মহিলা কলেজে উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষে ভর্তি নিচ্ছে ২ হাজার ৭৯০ টাকা। অথচ আমাদের কলেজে নেওয়া হচ্ছে, ৩ হাজার ৪৯১ টাকা। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৭০০ টাকা ফি বেশি নেওয়া হচ্ছে। ফি বৃদ্ধির একটা যৌক্তিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নওগাঁ সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আরমান হোসেন বলেন, ‘সকাল ৯ টায় ক্লাস করার উদ্দেশ্যে কলেজে এসেছিলাম। অধ্যক্ষ স্যারের রুমের সামনে দেখি বেশ গোলমাল হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে কলেজের মাইকে ঘোষণা শুনি স্ট্যাফদের উপর হামলা করা হচ্ছে আপনারা সকলেই এগিয়ে আসেন। কিন্তু ঘটনাস্থলে যেয়ে দেখি, কলেজের স্টাফরা মিলে একজন শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারপিট করতেছে। তারা স্ট্যাম্প ও বাশ দিয়ে তার শরীরে বিভিন্ন অংশে আঘাত করে। একপর্যায়ে তাঁকে কলেজ থেকে বের করে দেন। এরপরে ওই শিক্ষার্থীর পক্ষে অন্য শিক্ষার্থীরা জমায়েত হয়ে কলেজ গেটের সামনে বিক্ষোভ করতে থাকে।’
এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সামসুল হক বলেন, ‘ভর্তি প্রক্রিয়ার রুমে আমাদের মূল্যবান যন্ত্রপাতি আছে। জুনায়েদের নেতৃত্বে কয়েকজন ছাত্র সেখানে গিয়ে গোলমাল শুরু করে। সেখানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির হলে মূল্যবান জিনিসপত্রের ক্ষতি হতে পারে এই আশঙ্কায় কলেজ স্টাফরা প্রথমে তাঁদেরকে সেখান থেকে সরে গিয়ে দাবি নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। আমাদের এক স্টাফের গায়ে হাতে তুলে জুনায়েদ। একপর্যায়ে কর্মচারীরা যেভাবেই হোক জুনায়েদকে সেখানে থেকে বের করে দেয়। এ সময় কর্মচারীদের সঙ্গে তাঁর হাতাহাতি হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’