রোদের আলো যখন দুপুরের পাতায় নেচে বেড়াচ্ছিল, তখনই বদলগাছীর আকাশে বেজে উঠলো এক মায়াবী সুর, টাপুর টুপুর করে ঘোড়ার খুরের শব্দ, সঙ্গে ঝংকারে মিশে যাওয়া ঘণ্টাধ্বনি। যেন সময় থেমে গেছে এক গ্রামীণ রূপকথার পাতায়। সেই স্বপ্নের ছন্দে এগিয়ে আসে এক রাজকীয় বরযাত্রা, ঘোড়ার গাড়ীতে চড়ে কনের বাড়ির পথে বর আসিফ হোসেন।
বদলগাছী উপজেলার পয়নারী গ্রামে এমন দৃশ্য এখন আর সচরাচর দেখা যায় না। বরের গাড়ির চারপাশে সাজানো রঙিন ফিতা, ঝলমলে গাঁদা ফুল, আর গ্রামের মানুষদের মুখে একরাশ হাসি। দুপুরটা যেন পরিণত হলো এক উৎসবের দিনে।
জানা গেছে, উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের কৃষক আফতাব হোসেনের ছেলে প্রকৌশলী আসিফ হোসেনের বিয়ে হয় একই উপজেলার পয়নারী গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলামের মেয়ে মুসফিকা আশরাফির সঙ্গে। আসিফ পেশায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ডানা গ্রুপে চাকরিজীবী। আধুনিক সময়েও তিনি বেছে নিয়েছেন অতীতের রোমান্টিকতা— ঘোড়ার গাড়ীতে চড়ে বিয়ে করতে যাওয়া।
১২টি মাইক্রোবাস, ৫০টিরও বেশি মোটরসাইকেল আর প্রায় তিন শতাধিক বরযাত্রী নিয়ে রওনা হয় বরযাত্রা। গ্রামের প্রতিটি মোড়ে তখন মানুষের ঢল কেউ ছবি তুলছে, কেউ আবার হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে নবদম্পতিকে।
বর আসিফ বলেন,“শখের বসেই ঘোড়ার গাড়ীতে চড়ার পরিকল্পনা করি। বাবা-মা ও ছোট বোন সবাই উৎসাহ দিয়েছে। অনেক খোঁজার পর অবশেষে মহাদেবপুর থেকে গাড়িটি পাই। এটা আমার জীবনের এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা— এক কথায় দারুণ।”
কনে মুসফিকা হাসতে হাসতে জানান, “এমন আয়োজনের কথা ভাবিনি। এখন তো সবই মোটরগাড়ি আর আলোকসজ্জায় ভরা বিয়ে। কিন্তু ঘোড়ার গাড়ীতে বিয়ে— এটা তো একেবারে সিনেমার মতো! আমি সত্যিই অবাক ও আনন্দিত।”
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক আবু সাঈদ রোমেন রিপু বলেন,“বর আমার মামাতো ভাই। ছোটবেলা থেকেই ওর রাজকীয় বিয়ের স্বপ্ন ছিলো। আজ তা পূরণ হতে দেখে আমরা সবাই মুগ্ধ। গ্রামের মানুষও দারুণ উপভোগ করছে।”
সেই বিকেলের হাওয়া যেন পুরোনো দিনের গন্ধে ভরে উঠেছিল। ঢোলের তাল, ফুলের গন্ধ, হাসির ঝরনা— সব মিলিয়ে পয়নারী গ্রামে ফিরে এসেছিল হারিয়ে যাওয়া উৎসবের আমেজ।
এ যেন আধুনিকতার ভিড়ে ঐতিহ্যের কোমল ছোঁয়া— যেখানে ভালোবাসা, গ্রামীণ সৌন্দর্য আর আবেগ মিলে বুনেছে এক চিরন্তন গল্পের সুর।


