- রম্য লেখক, আমিনুল হকঃ
গোল্লাছুট, দাঁড়িয়াবান্দা, কানামাছি, বউচি, লুকোচুরি, ডাঙগুলী, মোরগলড়াই, হৈলডুব— এসব ছিল আমাদের শৈশবের প্রিয় খেলা। একসময় গ্রামবাংলার পাড়া-মহল্লায় কিশোর-কিশোরীরা এসব খেলায় মেতে উঠত প্রাণভরে। লোকজনের এসব খেলা যেমন আনন্দ-বিনোদনের উৎস ছিল, তেমনি শরীরচর্চা ও মানসিক বিকাশেও রাখত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
খেলায় হারজিত নিয়ে খুনসুটি হতো, তবুও পরদিন সকালেই সবাই আবার জড়ো হতো— কখনো গোল্লাছুটের মাঠে, কখনো লুকোচুরির আড়ালে। গোধূলি অবধি চলত হৈ চৈ আর হাসির ঝরনা। সন্ধ্যায় কুপি বাতি বা হারিকেনের আলোয় পড়ার সময়, সকালে দল বেঁধে পাঠশালায় যাওয়ার দৃশ্য— সবকিছুই আজও স্মৃতিতে উজ্জ্বল।
তাইতো কবি বনদে আলী মিয়া তাঁর অমর কবিতা “আমাদের গ্রাম”-এ লিখেছেন—
“পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই,
একসাথে খেলি আর পাঠশালে যাই।”
কবি এখানে গ্রামের প্রকৃত জীবনচিত্র ও শৈশবের সেই সরল আনন্দকে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি বলেননি ক্রিকেট, ফুটবল বা ব্যাডমিনটনের কথা; বলেছেন আমাদের মাটির গন্ধ মিশে থাকা লোকজ খেলাধুলার কথা।
কিন্তু আজ প্রযুক্তির অগ্রগতি ও বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনে হারিয়ে যাচ্ছে সেই চিরচেনা খেলাগুলো। নব প্রজন্মের অনেকেই গোল্লাছুট, দাঁড়িয়াবান্দা কিংবা ডাঙগুলীর নামই শোনেনি। এমনকি আমাদের জাতীয় খেলা হাডুডুও আজ অপরিচিত হয়ে পড়েছে।
প্রতি বছর স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া অনুষ্ঠানেও লোকজ খেলাগুলোর কোনো স্থান থাকে না। ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য, হারিয়ে যাচ্ছে শৈশবের হাসি ও মাঠের প্রাণচাঞ্চল্য।


