রম্য লেখক, আমিনুল হকঃ
গ্রামবাংলায় বলা হয় হা-ডু-ডু, শহুরে নাম কাবাডি। এটি আমাদের জাতীয় খেলা। একসময় গ্রাম-গঞ্জের পাড়া-মহল্লায় হা-ডু-ডু তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। পাড়া-পাড়া, গ্রাম-গ্রামে জমজমাট টুর্নামেন্ট হতো। খেলা দেখানোর জন্য মাইকিং হতো, দর্শকরা ঢল নেমে আনন্দে মাতোয়ারা হতো। হার-জিত নিয়ে উত্তেজনায় উৎসবে মেতে উঠতেন দর্শকরা। জয় ছিনিয়ে আনতে দূর-দূরান্ত থেকে নামী খেলোয়াড় ভাড়া করা হতো।
হা-ডু-ডু’র জনপ্রিয়তার কারণে ১৯৭২ সালে জাতীয় খেলা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৯৭৩ সালে গঠিত হয় কাবাডি ফেডারেশন। শত বছরের পুরোনো হা-ডু-ডু এই দেশের মাটি ও মানুষের চেতনার সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে আছে। ঐতিহ্যবাহী ডাক দমে দমে “গুডু গুডু” এখনও কানে বাজে।
- কিন্তু কালের বিবর্তনে দেশের ক্রীড়া জগত থেকে হা-ডু-ডু প্রায় বিলুপ্তির পথে। গ্রামবাংলার খোলা মাঠে ময়দানে খেলা এখন শুধু স্মৃতি। চর্চা-অনুশীলন চোখে পড়ে না। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়েও জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু উপেক্ষিত। জাতীয় দিবসগুলোতেও ফুটবল বা ক্রিকেট প্রীতি ম্যাচ হয়, হা-ডু-ডু হয় না।
আমার ছেলে আবদুল্লাহ আদনানকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমাদের জাতীয় খেলা কী? বইয়ের পাতা থেকে উত্তর দিল, “কাবাডি।” খেলা কখনও দেখেছো? না। ছেলের উত্তর শুনে অবাক হওয়া যায় না, বরং জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু’র বিলুপ্তি অনুধাবন করা যায়।
বিশিষ্ট ক্রীড়া বিশ্লেষক আতিকুর রহমান বলেন, পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আমাদের জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু হারিয়ে যাচ্ছে। দেশের বড় বড় অংশীজনদের এগিয়ে আসা দরকার খেলা বাঁচিয়ে রাখার জন্য।
হা-ডু-ডু বা কাবাডি আমাদের জাতীয় খেলা হিসেবে এক সময় গ্রাম বাংলার প্রাণবন্ত সংস্কৃতির অংশ ছিল। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতা ও চর্চার অভাবে আজ এটি হারিয়ে যেতে বসেছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোতেও খেলার উপস্থিতি কমে গেছে। দেশের ক্রীড়া উন্নয়নে এবং ঐতিহ্য রক্ষায় বড় বড় অংশীজনদের এগিয়ে এসে হা-ডু-ডুকে পুনরায় সুপ্রতিষ্ঠিত করা অত্যন্ত জরুরি।
আরিফুল ইসলাম রনক


