শাহজাদপুর থেকে নাজমুল হক:
জীবন এক হিসাবের খাতা। কখনও ছয়, কখনও নয়। আর এই ছয়-নয় হিসাব কষতে কষতে দিন শেষ হয়। সুখ পাখী কখন তাঁর দারোয়ানায় এসে বসবে— সেই অপেক্ষা জকিম সরদারের ছোটবেলা থেকে।
জকিম সরদারের জন্ম শাহজাদপুর থানার জগতলা গ্রামে। বয়স যখন ১২, তিনি প্রতিবেশী গৃহস্থ খাদেম মন্ডলের বাড়িতে রাখালীর কাজ শুরু করেন। মাসিক মাইনে ছিল চার টাকা। মাস শেষে এই চার টাকা পিতা নইমুদ্দিনের হাতে তুলে দিতেন। এভাবেই শুরু হয় তাঁর জীবনের অবিরাম লড়াই।
বছর ঘরে বছর ঘরে গৃহস্থ পরিবর্তন, এ বাড়ি থেকে সে বাড়ি। তবে থেমে যাননি জকিম। জীবনের দুঃখ-কষ্টের স্রোতে তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন এক যোদ্ধার মতো। এক সময় পিতা চলে গেলে সাত ভাইবোনের দায়িত্বও কাঁধে পড়ে। রোদে পুড়ে যাওয়া মুখ, একেকটি কঠিন দিন—সবই তাঁর সাহসিকতার সাক্ষী।
২০০৬ সালে জীবনে আরও একটি দুঃখ আসে। স্ত্রী জরিনা বেগম চলে যান না ফেরার দেশে। কিছুটা ভেঙে পড়েন জকিম, তবে থেমে থাকা জীবনের নিয়ম নয়। নতুন করে ঘরে আনেন নাটোরের বনলতা সেন (বেবি নাজনীন)-কে।
আজও জগতলা গুদরা ঘাটে চলছে জকিম সরদারের জীবিকার লড়াই। কলা, পাউরুটি, বিস্কুট, চা-পান ও সিগারেটের পসরা দিয়ে দিন পার করছেন তিনি। দিনশেষে যা আয় হয়, সেটি দিয়েই টিকে রয়েছেন এই যোদ্ধা।
জকিম সরদারের গল্প শুধু এক মানুষের সংগ্রামের নয়; এটি সীমাহীন ধৈর্য, সাহস ও জীবন যুদ্ধের এক জীবন্ত উদাহরণ।


