রম্য লেখক, আমিনুল হকঃ
শামুক জীববৈচিত্র্যের অন্যতম সদস্য। প্রাচীনকাল থেকে প্রানীবিদ্যা শিখিয়েছে, শামুকের পানি পরিশোধনে অসাধারণ ভূমিকা রয়েছে। তাই এটিকে বলা হয় প্রতিকৃতির ফিল্টার।
প্রাকৃতিকভাবে শামুকের দেহে একটি বিশেষ অঙ্গ থাকে, যা দূষিত পানি পরিশোধন করতে সাহায্য করে। প্রথমে শামুক দূষিত পানি গ্রহণ করে, এরপর তার ফিল্টারের মাধ্যমে পানি পরিশোধন করে। পরিশোধিত পানি পুনরায় মাটিতে ছেড়ে দেয়। এভাবেই শামুক প্রাকৃতিকভাবে পানি ফিল্টার করে পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখে।
শামুক শুধু পানি পরিশোধনেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি পচা লতাপাতা খেয়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। শামুকের মিউকাস বা লালা ত্বক উজ্জ্বল রাখতে কার্যকর, তাই প্রাচীনকাল থেকে প্রসাধন সামগ্রী তৈরিতে শামুকের ব্যবহার হয়ে আসছে। এছাড়া শামুকের খোলসের ক্যালসিয়াম কার্বনেট চুন তৈরির প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবার শামুক কখনও ভোজন বিলাসীদের প্রিয় খাবার হিসেবেও বিবেচিত।
এক সময় গ্রামবাংলার পথে, প্রান্তরে, বিল-ঝিল, নদী-নালা ও পুকুরে প্রচুর শামুক দেখা যেত। বৃষ্টির পর এক ঝলকেই শামুকের দেখা মিলত। সেই কারণে সমাজে শামুক নিয়ে নানা প্রবাদও প্রচলিত হয়েছে, যেমন—“পচা শামুকে পা কাটা” বা “শম্বুক গতি।”
কিন্তু আজ শামুক প্রকৃতিতে বিলুপ্তির পথে। জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার, খাল-বিল ভরাট ও বনাঞ্চল উজাড় করার ফলে শামুকের আবাসস্থল সংকুচিত হচ্ছে। এছাড়া অসাধু ব্যবসায়ীরা শামুক নিধন ও সংরক্ষণে ক্ষতিকর কার্যকলাপ চালাচ্ছেন; তারা শামুক সংগ্রহ করে বিভিন্ন মাছের হ্যাচারীতে বিক্রি করছেন।
যদি এ পরিস্থিতি চলতে থাকে, তবে প্রাকৃতিক ফিল্টার শামুক হারিয়ে গেলে পরিবেশেও বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তাই শামুককে রক্ষা করতে সঠিক পরিকল্পনা ও কার্যকর সংরক্ষণ ব্যবস্থা নেওয়া এখনই জরুরি।


