শাহজাদপুর থেকে নাজমুল হক:
শাহজাদপুর উপজেলার চর অঞ্চলের মানুষের জীবন যেন ভরা কষ্টে। নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত এসব মানুষ যেন অন্য এক গ্রহের বাসিন্দা। উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে এখনো পিছিয়ে তারা বহু দূরে।
উপজেলা সদর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এ জনবসতিপূর্ণ চর এলাকার গ্রামগুলো হলো—বারোপাখিয়া, ধীতপুর, সোনাতনী, চাঁনতারা, কুরশি, মাকরা, দইকান্দি, বাঙগালা, যুশখোলা, ধলাই ও জগতলা। এ সব গ্রামে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস।
চরবাসীর একমাত্র ভরসা গুদরা নৌকা। এ নৌকা ধরার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় তাদের। একবার নৌকা না পেলে ভোগান্তির শেষ থাকে না। যাতায়াতের এই দুর্ভোগই যেন চরবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী।
স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও চরম অবহেলায় রয়েছেন চরবাসী। এলাকায় কোনো হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হলে তাদের ভরসা পল্লী চিকিৎসক বা হাতুড়ে ডাক্তারের উপর। অনেক সময় ভরসা রাখতে হয় ঝাড়ফুঁকের মতো অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ওপরও।
শিক্ষা ব্যবস্থার চিত্রও একই রকম করুণ। চর অঞ্চলে তেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। বারোপাখিয়া, ধীতপুর ও চাঁনতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও, শিক্ষকরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারেন না। গুদরা নৌকার ওপর নির্ভরতা ও দূরপথের দুর্ভোগের কারণে অনেক সময় বিদ্যালয়ে পৌঁছানো সম্ভব হয় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, “চর অঞ্চলের বিদ্যালয়ে বদলি মানে এক ধরনের আজাব ভোগ করা। চাকরি আর জীবিকার স্বার্থে সেই কষ্টই সহ্য করতে হয়।”
বিশিষ্ট সমাজসেবক হাজী মনোয়ারুল হক বলেন, “চর অঞ্চলে কোনো স্থায়ী হাটবাজার নেই। প্রতিদিনের বাজারসওদার জন্যও চরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাই সেখানে একটি স্থায়ী হাট বা বাজার গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।”
এ বিষয়ে বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশী ডা. এম এ মুহিত বলেন, “চর অঞ্চলের মানুষের উন্নয়ন করা আমার ইচ্ছা আছে। সুযোগ পেলে তাদের মৌলিক সমস্যাগুলোর সমাধানে উদ্যোগ নেব।”
চর অঞ্চলের মানুষ তাই আজও একটাই আশা বুকে ধারণ করে আছে—তাদের দুঃখের অবসান হোক।


