শাহজাদপুর থেকে নাজমুল হক:
এক সময়ের সমৃদ্ধ গ্রাম জগতলা- আজ শুধু স্মৃতির আরেক নাম। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার এ গ্রামটি কয়েক দশক আগেও ছিল কৃষি ও তাঁত শিল্পের উপর দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যস্ত জনপদ। ধান, গম, সরিষা, কালাই, তিল ও পাটের সবুজ মাঠে দোল দেওয়া হাওয়ার সঙ্গে ঘরে ঘরে বেজে উঠত তাঁতের শব্দ। পরিবারের সবাই মিলে তৈরি করতেন রঙিন শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা—যেগুলো ছড়িয়ে পড়ত দেশের নানা প্রান্তে।
কিন্তু সেই জগতলা আর আগের জায়গায় নেই। যমুনার ভাঙনে গ্রামের বিশাল অংশ আজ বিলীন। নদী গিলে নিয়েছে মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি আর বহু প্রজন্মের স্মৃতি। কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন আশপাশের গ্রামে, কেউ চলে গেছেন ঢাকা, গাজীপুর বা নারায়ণগঞ্জে। যারা টিকে আছেন, তাদের জীবন এখন টানাপড়েনের। তাঁতশিল্পের কারিগর ও দক্ষ কৃষকরা আজ দিনমজুর; কখনো ইটভাটা, কখনো মাঠে নামতে হচ্ছে পেট চালাতে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার মুখে একই বেদনা—বেঁচে থাকার সংগ্রাম।
স্থানীয়রা জানালেন, তারা শুধু কাজ চান। সরকার বা কোনো উন্নয়ন সংস্থা যদি কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেয়, তাহলে আবার ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে বলে তাদের আশা।
এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সনেকা খাতুন বলেন, “জগতলার মতো নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা খুব জরুরি। ক্ষুদ্রশিল্প ও তাঁতশিল্প পুনরুজ্জীবন কর্মসূচি গ্রহণ এবং নদীভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিলে আবারও ফিরবে জগতলার পুরোনো মুখ।”
জগতলা এখন হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের এক নাম হলেও এখানকার মানুষের স্বপ্ন এখনো টিকে আছে। তাদের বিশ্বাস, একদিন হয়তো আবার তারা তৈরি করবে নতুন জগতলা—যেখানে নদীর ভয় নয়, থাকবে জীবনের জয়।


