রম্য লেখক, আমিনুল হকঃ
চাকাবিহীন বাহন পালকি আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। একসময় গ্রামবাংলার বিয়ে-সাধীতে বর-কনেকে বহনের একমাত্র বাহন ছিল পালকি। শুধু তাই নয়, ধনী ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের বহনের ক্ষেত্রেও পালকির ব্যাপক প্রচলন ছিল।
প্রাচীনকাল থেকেই পালকি ব্যবহারের প্রচলন থাকলেও বাংলায় পালকির সূচনা হয় ধারণা করা হয় ১৫শ শতকে। ধনীদের আরাম-আয়েশে যাতায়াত, বিয়ে শোভাযাত্রা কিংবা বিশেষ অনুষ্ঠান—সবক্ষেত্রেই পালকি ছিল গর্ব ও মর্যাদার প্রতীক।
১৯৭৮–৭৯ সালের দিকে আমার মেঝ কাকা আবু শামার বিয়েতে পালকিতে চড়ার সুযোগ হয়েছিল। ফেরার পথে পালকি-বাহক বা “বেহারারা” বিয়ের গীত গেয়ে বরযাত্রীদের আনন্দ দিচ্ছিলেন—সেই স্মৃতি আজও মনে গেঁথে আছে।
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি (শাহজাদপুরে) এখনও কাঠের তৈরি একটি পালকি সংরক্ষিত আছে। সাহিত্যে, কবিতায় ও গানে বারবার এসেছে পালকির উল্লেখ। রবীন্দ্রনাথের ‘বীরপুরুষ’ কবিতায় পালকির বর্ণনা এক ভিন্ন অনুভূতি এনে দেয়। আবার অনেক গ্রামবাংলার গানেও পালকির ছন্দ খুঁজে পাওয়া যায়।
উনবিংশ শতাব্দীতে সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন হলে পালকির যুগ ক্ষয় হতে শুরু করে। বর্তমানে পালকি প্রায় বিলুপ্তপ্রায়, তবে এখনও এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে কিছু প্রচেষ্টা দেখা যায়। যেমন—হংকংয়ে প্রতিবছর পালকি রেস আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশে পালকি এখন স্মৃতির অংশ হয়ে গেলেও সমাজে এখনও এর প্রতি আগ্রহ কম নয়। প্রশ্ন হলো—হারিয়ে যাওয়া এই ঐতিহ্য কীভাবে টিকিয়ে রাখা যায়?


