রাজশাহী প্রতিনিধি :
১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস ২০২৫ উপলক্ষে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ রাজশাহী মহানগরীর চেম্বার ভবনের সামনে মানববন্ধন ও র্যালির আয়োজন করে।
অধিকারের রাজশাহী কো-অর্ডিনেটর এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার রাজশাহী ব্যুরো মঈন উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)’র সহকারী মহাসচিব ও রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ড. সাদেকুল ইসলাম স্বপন, রাজশাহী এডিটরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব অপু, গুমের স্বীকার হওয়া মাসুদ রানা, গুমের স্বীকার ইব্রাহীম হোসেন সরকার এবং গুমের স্বীকার আল-আমিন, মানবাধিকার কর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আনোয়ার হোসেন ফিরোজ, রাজশাহী ফটো জার্নালিষ্ট এ্যাসেসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও মানবাধিকার কর্মী আসাদুজ্জামান আসাদ, মানবাধিকার কর্মী কাজী নুরুল ইসলাম, অধিকার কর্মী এম শামীম, সেভ আওয়ার সোসাইটির প্রতিনিধি মাহমুদুল হাসান প্রমূখ।
মানববন্ধনে ‘অধিকার’-এর বিবৃতি পাঠ করেন মানবাধিকার কর্মী হাবিবুল্লাহ মোহাম্মদ কাউছারী।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ আজ গণঅভ্যুত্থানের পর একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জনগণ কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন ঘটালেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনা এখনও বন্ধ হয়নি। বিচারবহির্ভূত হত্যা, হেফাজতে নির্যাতন, কারাগারে মানবাধিকার লঙ্ঘন, চিকিৎসার অভাবে বন্দিদের মৃত্যু এসব ঘটনা জুলাই সনদের আত্মাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
বক্তারা বলেন, অতীত সরকারের সময়কার অকার্যকর ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা এখনো বহাল থাকায় অসংখ্য নিরীহ মানুষ কারাগারে বছরের পর বছর আটক রয়েছেন। নিম্ন আদালতে নির্যাতনের মাধ্যমে নেওয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অভিযোগও উদ্বেগজনক। যদিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অপশনাল প্রটোকল অব কনভেনশন এগেনস্ট টর্চার (অপক্যাট) ও জাতিসংঘের গুম সংক্রান্ত কনভেনশন অনুস্বাক্ষর করায় মানবাধিকার সুরক্ষায় অগ্রগতি হয়েছে, তবুও গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ ২০২৫–এ থাকা মৃত্যুদণ্ডের বিধান বাতিল করার দাবি জানানো হয় মানববন্ধন থেকে।
বক্তারা আরও বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে হতে যাওয়া ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতা বেড়ে চলেছে, যা একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য হুমকি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দুর্বলতা সহিংসতাকে আরও উসকে দিচ্ছে। ইতোমধ্যেই এসব সহিংসতায় বহু প্রাণহানি ঘটেছে।
অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি ও গণপিটুনির মতো ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে বক্তারা বলেন—আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, যা একটি সভ্য রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য অশনি সংকেত।
মানববন্ধনে বক্তারা জোর দিয়ে বলেন—বাংলাদেশকে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে, যাতে জনগণের অর্জন অটুট থাকে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ হয়।
বক্তারা মানবাধিকার রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।


