ভালোবাসা—যে শব্দে থাকা উচিত মায়া, মমতা, বিশ্বাস আর সম্পর্কের বন্ধন। কিন্তু সেই ভালোবাসাই কখনো কখনো যখন লালসা, প্রতারণা আর প্রতিশোধে পরিণত হয়, তখন জন্ম নেয় নৃশংসতার গল্প। তেমনই এক ঘটনা ঘটেছে বগুড়ার সদর উপজেলার হাজরাদীঘি গ্রামে। পরকীয়ার টানে এক নারী নিজের স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যা করেছেন।
নিহত জহুরুল ইসলাম (৪০) ছিলেন স্থানীয় এক বেকারি ব্যবসায়ী। স্ত্রী শামিমা আক্তার (৩২) আর তার খালাতো ভাই বিপুল মিয়া (৩৭) এখন পুলিশ হেফাজতে। তাদের দুজনের মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্কই পরিণতি দিয়েছে এই হত্যাকাণ্ডে।
জহুরুল ও শামিমার সংসারে ছিল এক ছেলে (১০) ও এক মেয়ে (৬)। এখন তারা অনাথ হয়ে পড়েছে। প্রতিবেশীরা বলছেন, জহুরুল ছিলেন পরিশ্রমী ও পরিবারপ্রেমী মানুষ। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে দাম্পত্য সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল।
বুধবার (৫ নভেম্বর) ভোরে বগুড়া সদর উপজেলার হাজরাদীঘি গ্রাম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তদন্তে জানা গেছে, সোমবার রাতে শামিমা পরিকল্পনা করেন স্বামীকে অচেতন করার। তিনি দুধের সঙ্গে প্রায় ১৫টি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন। অচেতন হয়ে পড়লে খবর দেন প্রেমিক বিপুলকে। তারপর দুজনে মিলে জহুরুলকে টেনে নিয়ে যান বাড়ির পাশের একটি অর্ধনির্মিত ঘরে। সেখানে দেয়ালে আঘাত করে তাকে গুরুতর জখম করেন। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ভাঙা টাইলস দিয়ে মাথায় আঘাত করেন বারবার।
সব শেষ, নিথর দেহটিকে ফেলে রাখা হয় পাশের ধানক্ষেতে—এক ভয়াবহ পরিণতির সাক্ষী হয়ে।
হত্যার পর যেন সিনেমার দৃশ্যের মতোই ঘটেছে ঘটনা। পরদিন সকালে শামিমা সাংবাদিকদের সামনে এসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে স্বামীর হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার দাবি করেন। তার সেই নাটকীয় আচরণ প্রথমে সবাইকে বিভ্রান্ত করে। কিন্তু নিহতের বাবার দায়ের করা মামলার তদন্তে বেরিয়ে আসে আসল সত্য। ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয় এক নারীর পরকীয়ার টানাপোড়েন আর নৃশংস পরিকল্পনার নেপথ্যের কাহিনি।
বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তফা মঞ্জুর বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শামিমা ও বিপুল হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। পরকীয়ার সম্পর্কই এই হত্যার মূল কারণ।”


