আজ ৭ নভেম্বর—বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে দিনটি প্রতি বছর ফিরে আসে বাঙালির রাজনৈতিক স্মৃতির পাতায়, নতুন করে জাগিয়ে তোলে জাতির ঐক্য, দেশপ্রেম ও স্বাধীন চেতনার প্রতিধ্বনি।
পঞ্চাশ বছর আগে, ১৯৭৫ সালের এই দিনে, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও সাধারণ মানুষের এক যৌথ বিপ্লব বাংলাদেশকে টেনে তোলে অরাজকতা ও অনিশ্চয়তার অন্ধকার থেকে। ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তে মানুষের ঢল নামে রাস্তায়। বিজয়ের স্লোগানে মুখরিত হয় নগর-গ্রাম— সিপাহী-জনতা ভাই ভাই”, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ” মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ”।
এই বিপ্লবের মধ্য দিয়েই রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
মুক্তির নতুন আহ্বান
সেদিন জাতি আবারও শুনেছিল এক পরিচিত কণ্ঠ—ুআমি জিয়া বলছি।” মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে যে কণ্ঠে স্বাধীনতার ডাক এসেছিল, সেই কণ্ঠেই এদিন জেগে উঠেছিল আশ্বাসের সুর। দীর্ঘ অনিশ্চয়তার ঘোর কেটে গিয়ে নতুন ভোরের সূচনা হয় বাংলাদেশের। মানুষ অনুভব করেছিল মুক্তির নতুন প্রেরণা, আত্মবিশ্বাস আর জাতীয় ঐক্যের আহ্বান।
বিপ্লবের তাৎপর্য
৭ নভেম্বরের বিপ্লব বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন মোড় এনে দেয়। জেনারেল জিয়া দেশকে টেনে আনেন ভূরাজনৈতিক ও নব্য-ঔপনিবেশিক ষড়যন্ত্রের জাল থেকে। গড়ে তোলেন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, স্বাতন্ত্র্যবোধের ভিত্তিতে গঠিত বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ”।
সেই দিন থেকেই শুরু হয় জাতীয় সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে নতুন ধারা—যা আজও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অনন্য অধ্যায় হয়ে আছে।
বিএনপি’র কর্মসূচি
এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো নিয়েছে নানা কর্মসূচি। শুক্রবার সকাল ৬টায় নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। সকাল ১০টায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন দলের নেতারা।
বিকেলে নয়াপল্টন থেকে র্যালি বের হয়, অংশ নেয় রাজধানীসহ সারাদেশের নেতাকর্মীরা।
এছাড়া ৫ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে বিএনপির সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি। এর মধ্যে আছে আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ডকুমেন্টারি প্রকাশ ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ। আগামী ১২ নভেম্বর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে হবে মূল আলোচনা সভা।
ইতিহাসের প্রতিধ্বনি
৭ নভেম্বর শুধু একটি তারিখ নয়—এ দিনটি স্বাধীনতার পরবর্তী বাংলাদেশের পুনর্গঠনের প্রতীক। সেই বিপ্লব আজও মনে করিয়ে দেয়, ঐক্যবদ্ধ সিপাহী ও জনতার শক্তিই পারে জাতিকে আবারও নতুন পথ দেখাতে।
পঞ্চাশ বছর পরও ইতিহাসের সেই আহ্বান যেন ধ্বনিত হয়—
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, সিপাহী-জনতা এক হও।”


