সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ মেলায় নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার দামপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পারভীন বেগমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা মেলার পরেও ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত অথবা অন্য প্রতিষ্ঠানে বদলি না করায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
উপজেলা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পারভীন বেগমের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের নামে দেওয়া সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গত ২০ জুলাই মাসে এলাকাবাসীর পক্ষে জুলফিকার আলী নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগে সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ ছাড়াও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে না এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠন, বিদ্যালয়ের জমি প্রভাবশালীদের সঙ্গে আঁতাত করে কম মূল্যে লিজ দিয়ে সরকারের আর্থিক ক্ষতি করার অভিযোগ তোলা হয়। লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি তদন্ত করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পারভীন বেগমের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে। তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত শিক্ষক পারভীন আক্তারের বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় মামলা করা হবে না তা জানতে ওই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ করে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। নোটিশের জবাবে ওই শিক্ষকের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়।
পারভীন আক্তারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সাধারণত কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠলে তাঁকে অন্য প্রতিষ্ঠানে বদলি করা হয়ে থাকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বদলি নিয়ে উচ্চ আদালতে চলমান একটি মামলার আদেশের কারণে প্রধান শিক্ষকদের বদলি প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে আছে। এমন আদেশ না থাকলে হয়তো ওই শিক্ষককে বদলি করা হতো। তবে বিভাগীয় মামলা হওয়ার পর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
অভিযোগকারী জুলফিকার আলী বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পরেও কেন তাঁকে বহিষ্কার করা হলো না তা আমাদের বদগম্য হচ্ছে না। এমনকি অন্তত তাঁকে বদলি করা হলেও ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বুঝতো তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা চাই অনতিবিলম্বে দুর্নীতিবাজ এই শিক্ষককে বদলি কিংবা বহিষ্কার করা হোক। অন্যথায় বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার শৃঙ্খলা ফিরবে না।’


