
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার রঞ্জনিয়া গ্রামে সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে মারধর করে মারাত্মভাবে জখম করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক যুবদল নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসী। এ ঘটনায় বুধবার দুপুরে ১০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ১০-১৫ জনের নামে মামলা হয়েছে। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে রাণীনগর উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক শরিফুল ইসলামকে।
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে কালিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবাদুল ইসলাম, রনজনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ইউনুচ আলী, আহত সাইফুলের বাবা জাহিদুল ইসলাম ও তাঁর মা শিরিনা আখতার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, রঞ্জনিয়া গ্রামের বাসিন্দা রেজাদুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী যুথীর পারিবারিক কলহ চলে আসছে। স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় যুথী তাঁর বাবার বাড়ি বড়বড়িয়া গ্রামে থাকেন। শশুরের মৃত্যুর খবর পেয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে যুথী স্বামীর বাড়িতে আসেন। এ সময় রেজাদুল, তাঁর ভাই রশিদুল ও নিকেদুল যুথীকে বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেয়। ওই সময় সেখানে উপস্থিত যুথীর খালাতো ভাই ও রেজাদুলের প্রতিবেশি সাইফুল ইসলাম এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে রেজাদুল ও তাঁর ভাইদের সঙ্গে তাঁর কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে কালিগ্রাম ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক ও উপজেলার বরগাছা গ্রামের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সাইফুলের জামার কলার ধরে রেজাদুলের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সাইফুলের সঙ্গে শরিফুলের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে শরিফুল ফোন করে ৫০-৬০ জন সন্ত্রাসী ডেকে আনে। সন্ত্রাসীরা লাঠি, রড ও চাকুসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত ছিল। গ্রামের লোকজনের সামনেই যুবদল নেতা শরিফুল ইসলাম ও তাঁর লোকজন সাইফুলকে বেধড়ক মারধর করে। একপর্যায়ে সাইফুল অজ্ঞান হয়ে পড়লে তারা সেখান থেকে চলে যায়।
ইউপি সদস্য এবাদুল ইসলাম বলেন, যেভাবে একটা ছেলেকে মারধর করা হয়েছে সেটা খুবই ঘৃণ্য একটা কাজ হয়েছে। এ ধরণের ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। কিছু খারাপ লোকের কারণে পুরো গ্রামের শান্তি বিনষ্ট হয়ে গেছে।
সাইফুলের মা শিরিনা আখতার বলেন, ‘হামার একটাই ছেলে। সেই ছেলে এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়োছে। ওরা হামার ব্যাটাক বিনা দোষে মারিছে। হামার ব্যাটা কোমড় খাড়া করে দাড়াতে পারে না। পাঁচটা দাঁত ভ্যাঙ্গে গেছে। কথা বলতে পারোছে না। গ্রামবাসী আশ্বাস দিছিলো ওরা এর একটা বিচার করে দেবে। গ্রামবাসী সালিশও ডাকিছিলো কিন্তু শরিফুল, এজাদুল ও তাঁর ভাইয়েরা সালিশে আসেনি। এখন হামি থানা-পুলিশ করমু। হামার ব্যাটার জীবন ওরা নষ্ট করে দিছে। হামি এর বিচার চাই।’
জানতে চাইলে রনজনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও মাতবর ইউনুচ আলী বলেন, ‘সাইফুলকে মারধরের ঘটনার একটা সুষ্ঠু সমাধানের জন্য গত রোববার রাতে গ্রামে সালিশ ডাকা হয়েছিল। কিন্তু রহিদুল ও তার ভাইয়েরা, শরিফুল সালিশে না আসায় সেদিন কোনো সালিশ হয়নি। বিষয়টি সালিশে মিমাংসা না হওয়ায় গ্রামের মাতবরেরা সাইফুলের পরিবারকে বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলা করার পরামর্শ দিয়ে ওই দিন রাতে যে যার মতো বাড়ি চলে যায়।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত যুবদল শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রেজাদুল সম্পর্কে আমার ভ্যাগনে হয়। রেজাদুলের পারিবারিক সমস্যা মিমাংসার জন্য গত ৭ সেপ্টেম্বর রনজনিয়া গ্রামের সাইফুলের সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। সেখানে বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এখন আমাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির চেষ্টা চলছে।’
এ বিষয়ে রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাফিজ মো. রায়হান বলেন, রঞ্জনিয়া গ্রামে সাইফুল নামে এক ব্যক্তিকে মারধরের ঘটনায় ১০ জনের নাম উল্লেখ ও আরও ১০-১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে গতকাল বুধবার একটি মামলা হয়েছে। সাইফুলের বাবা জাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে এ ঘটনায় মামলা করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।