
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপরে রেকর্ড করা হয়।
বুধবার সকাল থেকে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রথমে ৭ সেন্টিমিটার ওপরে পৌঁছায়, পরে কিছুটা কমলেও বৃহস্পতিবার আবার বৃদ্ধি পায়। টানা ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হওয়ায় জেলায় দেখা দিয়েছে বন্যা। এতে নিম্নাঞ্চলের ৩০টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি, এবং তলিয়ে গেছে রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসলি জমি।

পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডালিয়া তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। সংস্থাটি জানিয়েছে, আগামী দুই দিন ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকতে পারে, যা লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা তৈরি করছে।
বন্যা সতর্কতা কেন্দ্রের তথ্যমতে, বর্তমানে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচে এবং ধরলা নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
প্লাবিত এলাকা
পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে—
- পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা: গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী
- কালীগঞ্জ: ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী
- আদিতমারী: মহিষখোচা, গোবর্ধন, কালমাটি, বাহাদুরপাড়া, পলাশী
- সদর উপজেলা: ফলিমারী, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী, গোকুন্ডা
পানিবন্দিদের ক্ষোভ ও দাবি
স্থানীয়রা জানান, জুলাইয়ের শেষ দিকে ও আগস্টের শুরুতে দুই দফা পানি বৃদ্ধির পর এবার তৃতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে। তারা ত্রাণের চেয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান চান।
গোবর্ধন এলাকার মতিয়ার রহমান বলেন, “বন্যার পানিতে সাত দিন ধরে রান্না করতে পারিনি। গরু-ছাগল ও পরিবারকে উঁচু জায়গায় রেখেছি। সাহায্যের চেয়ে চাই, যেন পানি আর না আসে।”

পানিবন্দি মর্জিনা বেগমের অভিযোগ, “গরু-ছাগলের খাবার জোগাড়ে কষ্ট হচ্ছে। ১০ কেজি চাল পেয়েছি, কিন্তু এটা সমাধান নয়। বারবার যেন বন্যা না হয়, সেই ব্যবস্থা চাই।”
খুনিয়াগাছের কৃষক আব্দুল আলীম বলেন, “বারবার বন্যায় ধান, পাট, মাছ সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। তিস্তা মহাপরিকল্পনা ছাড়া মুক্তি নেই।”
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। স্বল্পমেয়াদি বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং যেকোনো সমস্যায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পাউবো প্রস্তুত।
প্রসঙ্গত, চলতি মৌসুমে এটি তিস্তায় তৃতীয় দফা বন্যা। প্রথম দফা হয়েছিল ২৯ জুলাই এবং দ্বিতীয় দফা ৩ আগস্ট। এবার ১৩ আগস্ট থেকে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং বিপদের আশঙ্কা এখনও কাটেনি।