নিয়মিত পরিশ্রম মানুষের জীবনের স্বাভাবিক অংশ হলেও কিছু পেশায় দীর্ঘমেয়াদে কিডনির ক্ষতির ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কিডনি শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত পানি ছেঁকে রক্ত বিশুদ্ধ রাখে। কিডনি দুর্বল হলে শরীরে বিষক্রিয়া বাড়ার পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ (ঈকউ) হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিম্নলিখিত পেশার কর্মীরা কিডনি ঝুঁকিতে বেশি থাকেন:
১. প্রচণ্ড গরমে কর্মরত শ্রমিকরা
নির্মাণ, রাস্তা তৈরির কাজ, কৃষিকাজ বা কারখানায় কাজ করা শ্রমিকরা অতিরিক্ত ঘাম ঝরানোর কারণে দ্রুত পানিশূন্যতায় ভোগেন। এতে কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং দীর্ঘমেয়াদে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
২. রাসায়নিক বা বিষাক্ত ধোঁয়ার সংস্পর্শে থাকা শ্রমিকরা
রং, ব্যাটারি, আঠা, ট্যানারি কিংবা অন্যান্য শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ শরীরে জমে কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। এসব কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে কিডনি রোগের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি।
৩. ভারী ধাতুর সংস্পর্শে কর্মরত ব্যক্তিরা
সীসা, ক্যাডমিয়াম, পারদসহ ক্ষতিকর ধাতুর সংস্পর্শে দীর্ঘসময় কাজ করলে কিডনি ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা জানান, এসব ধাতু শরীরে জমে কিডনিতে স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।
৪. উচ্চচাপযুক্ত ও অনিয়মিত কর্মঘণ্টার কাজ
যেসব পেশায় মানসিক চাপ বেশি, ঘুম কম এবং রাতের শিফটে কাজ বেশি করতে হয়, সেসব ক্ষেত্রে রক্তচাপ ও হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
কিডনি সুরক্ষায় করণীয়
গরমে কাজ করলে প্রতি ২০ু৩০ মিনিট অন্তর পানি পান করতে হবে এবং ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হবে।
প্রয়োজনে লবণ ও খনিজসমৃদ্ধ পানীয় গ্রহণ করতে হবে।
রাসায়নিক বা ধাতুর সংস্পর্শে কাজ করলে অবশ্যই মাস্ক, গ্লাভস ও সুরক্ষামূলক পোশাক ব্যবহার করতে হবে।
উচ্চচাপযুক্ত কাজে থাকলে পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত খাবার গ্রহণ ও স্ট্রেস কমানোর অভ্যাস জরুরি।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বিশেষ করে কিডনি ফাংশন টেস্ট করানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পেশার ঝুঁকি পুরোপুরি এড়ানো সম্ভব না হলেও সচেতনতা, সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন কিডনি দীর্ঘদিন সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।


