চিকিৎসক, প্রতিবন্ধীদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৪ বছর

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর ফলে চিকিৎসক ও প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের বয়সসীমা সাধারণ প্রার্থীদের তুলনায় দুই বছর বেশি হয়ে ৩৪ বছর নির্ধারণ করা হচ্ছে।

গত বছরের ১৮ নভেম্বর সরকার ‘সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ অধ্যাদেশ, ২০২৪’ জারি করে। ওই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসসহ সব সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩২ বছর করা হয়।

এতে আগে থেকে প্রযোজ্য বিশেষ সুবিধাগুলো বাতিল হয়ে যায়। যেমন— সাধারণ প্রার্থীদের জন্য বয়সসীমা ছিল ৩০ বছর, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান, চিকিৎসক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বয়স ছিল ৩২ বছর, পঞ্চম ও ষষ্ঠ গ্রেডের কিছু পদে (কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট) বয়সসীমা ছিল ৩৫ ও ৪০ বছর। কিন্তু নতুন অধ্যাদেশে সবার জন্য সমানভাবে বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করায় এ বাড়তি সুবিধাগুলো বাতিল হয়ে যায়।

চিকিৎসকরা ইন্টার্নশিপ শেষ করার পর চাকরিতে প্রবেশ করেন। তাই তাদের দাবি ছিল, অন্যদের তুলনায় কমপক্ষে দুই বছর অতিরিক্ত সুযোগ দেওয়া। এ দাবির ভিত্তিতেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পিএসসির মাধ্যমে প্রস্তাব জমা পড়ে।

সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) প্রস্তাবে জানায়— যেসব পদে আগে থেকেই বয়সসীমা ৩৩ বা তার বেশি ছিল, তা অপরিবর্তিত থাকবে। চিকিৎসক ও প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩৪ বছর করা যেতে পারে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ গ্রেডের কিছু পদে আগের মতো বয়সসীমা ৩৫ ও ৪০ বছর রাখা উচিত।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে এ প্রস্তাবে একমত হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সংশোধিত অধ্যাদেশের খসড়া দ্রুত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।

তবে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের বয়স বাড়ানো নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। মন্ত্রণালয় মনে করছে, অতীতে বিভিন্ন বিতর্ক ও জটিলতার কারণে বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদের হাতে ছেড়ে দেওয়াই উত্তম হবে।

‘সরকারি অফিসের কম্পিউটার পারসোনেল নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯’ অনুযায়ী অনেক পদে বয়সসীমা ৩৫ থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল। নতুন অধ্যাদেশে সব বয়সসীমা ৩২ বছরে নামিয়ে আনার ফলে এসব ক্ষেত্রেও সংকট তৈরি হয়। এবার সংশোধনীতে আগের সুবিধা পুনর্বহাল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

চাকরিপ্রার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবি জানাচ্ছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পুলিশ কাঁদানো গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে তাদের সরালেও আন্দোলন চলতে থাকে।

পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কমিটি গঠন করা হয়। সাবেক সচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে কমিটি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স পুরুষদের জন্য ৩৫ ও নারীদের জন্য ৩৭ বছর করার সুপারিশ করেছিল। তবে সরকার পরে ৩২ বছরে স্থির হয়।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp