একসময় শহরের পিচঢালা অলিগলি, ব্যস্ত সড়ক, রেলস্টেশন কিংবা বাস টার্মিনালের পাশে সারি সারি পেডেলচালিত রিকশা ছিল নগরের চেনা দৃশ্য। মানুষের প্রতিদিনের যাতায়াতে অপরিহার্য এই তিনচাকার বাহনের বেলের টুংটাং আর ক্রিং ক্রিং শব্দে মুখর থাকত শহরের রাস্তাঘাট।
কিন্তু সময় বদলেছে। নগরজুড়ে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে সেই পরিচিত দৃশ্য। জায়গা দখল করে নিয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এক দশক আগেও যা ছিল নতুন অতিথি, এখন তা হয়ে উঠেছে যাত্রীদের প্রধান ভরসা।
শুরুতে অনেকে অভ্যস্ত হতে সময় নিলেও, ব্যাটারিচালিত রিকশার আরাম, স্বল্প সময়ের যাত্রা, চালকের কম পরিশ্রম—সব মিলিয়ে এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে দ্রুত। ফলে রিকশাচালকদের কথায়, “অটোরিকশা এসেছে আশীর্বাদ হয়ে।” কম পরিশ্রমে আয়ও হচ্ছে আগের তুলনায় বেশি।
অন্যদিকে দিন দিন কমছে পেডেল রিকশাচালকের সংখ্যা। অনেকেই পেশা বদলাচ্ছেন। কারণ, ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ঘাম ঝরিয়ে পেডেল ঘোরানোর সেই কঠিন জীবন এখন আর টেনে নেওয়া সম্ভব হয় না তাদের পক্ষে।
অটোরিকশা শহরের গতিতে এনেছে নতুন ছন্দ। স্কুলগামী শিশু থেকে অফিসগামী কর্মজীবী—সবাই এখন নির্ভরশীল এই চার্জচালিত বাহনে। ট্রাফিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে—শব্দদূষণ কমলেও যানজটের ধরন বদলেছে, অনেক ক্ষেত্রে বেড়েছেও।
তবু পেডেল রিকশা শুধু পরিবহন নয়, ছিল নগরের সংস্কৃতি, এক জীবন্ত ঐতিহ্য। সময়ের স্রোতে সেই ঐতিহ্য দ্রুত মুছে যাচ্ছে। খুব শিগগির হয়তো পেডেল রিকশা দেখা যাবে শুধু গল্পের বইয়ে, পুরনো চলচ্চিত্রে কিংবা স্মৃতির পাতায়—শহরের রাস্তায় আর নয়।


