প্রায় দুই বছর ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে।
গাজায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জামিনদার বা গ্যারান্টি দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, কাতার ও তুরস্ক ইতোমধ্যে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছে। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে এটি সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দ্য পলিটিকো-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির পর গাজায় স্থিতিশীলতা রক্ষায় একটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী (ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি ফোর্স) গঠনের বিষয়ে আলোচনা চলছে। এতে অংশ নিতে পারে তিনটি মুসলিম দেশ—পাকিস্তান, আজারবাইজান ও ইন্দোনেশিয়া। এক সক্রিয় ও এক সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই তিন দেশই এখন পর্যন্ত শীর্ষ প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যদিও আনুষ্ঠানিক সম্মতি এখনো মেলেনি।
এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া একমাত্র দেশ হিসেবে প্রকাশ্যে সেনা পাঠানোর ইচ্ছা জানিয়েছে। দেশটির সরকার জানিয়েছে, জাতিসংঘের অনুমোদনে শান্তিরক্ষী মিশনের আওতায় তারা প্রয়োজন হলে ২০ হাজার সেনা পাঠাতে প্রস্তুত। তবে ট্রাম্পের উপস্থাপিত পরিকল্পনায় জাতিসংঘের কোনো সরাসরি ম্যান্ডেট বা অনুমোদনের উল্লেখ নেই বলে জানায় পলিটিকো।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গাজায় যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে কাতার, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) সেনারাও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয়ে ইসরায়েলের একটি সামরিক ঘাঁটিতে অবস্থান করতে পারে। এসব বাহিনীর মূল দায়িত্ব হবে সংঘাত রোধ, ত্রাণবাহী যানবাহনের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করা এবং শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করা।
তবে এখন পর্যন্ত শান্তিরক্ষী বাহিনীর পূর্ণাঙ্গ ম্যান্ডেট, কাঠামো এবং অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা নির্ধারণ হয়নি। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে আরও কয়েক দফা আলোচনার প্রয়োজন হবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ শান্তি প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ট্রাম্প বলেন, “হামাসকে নিরস্ত্র করা হবে—ইচ্ছাকৃত বা প্রয়োজনে বাধ্যতামূলকভাবে।” তাঁর দাবি, এই পদক্ষেপই দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার চাবিকাঠি।
মার্কিন প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা ড্যানিয়েল শাপিরো মন্তব্য করেন, “গতি দেখানো এবং অংশগ্রহণকারী দেশ ও ম্যান্ডেট চূড়ান্ত করা শান্তি প্রক্রিয়াকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলবে। এখন সময় এসেছে কূটনৈতিক ঘোষণাগুলো বাস্তবে রূপ দেওয়ার।”
প্রসঙ্গত, প্রায় দুই বছর ধরে ইসরায়েলের অবরোধ ও হামলায় গাজায় বিপুল প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞের পর এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলো। আন্তর্জাতিক মহল এখন নজর রাখছে—নতুন এই শান্তি চুক্তি কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয় এবং গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসন ও নিরাপত্তা কাঠামো কেমনভাবে দাঁড়ায়।
বিশ্ব বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধবিরতির সফলতা নির্ভর করবে কত দ্রুত আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী মাঠে নামে এবং গাজায় স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া হয় তার ওপর।


