সাগর মিয়া, রংপুরঃ
রংপুর মহানগরীর হারাগাছ এলাকায় এক বিধবা নারীকে জোরপূর্বক গর্ভপাত করানো, অপহরণ এবং দেশীয় অস্ত্রের মুখে বিয়েতে বাধ্য করার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (১৭ নভেম্বর) ভুক্তভোগী মোছাঃ আছিয়া বেগম (৩৮) হারাগাছ থানায় আটজনকে আসামি করে লিখিত এজাহার দায়ের করেন। এ ঘটনায় স্থানীয়ভাবে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়- স্বামীর মৃত্যুর পর দারিদ্র্যের কারণে আছিয়া বেগম স্থানীয় সোলেমান ভাকরার বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। এই সুযোগে অভিযুক্ত হাসেন আলী বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন তাকে জোরপূর্বক অনৈতিক সম্পর্কে বাধ্য করেন।
পরে আছিয়া গর্ভবতী হলে হাসেন আলী ও তার সহযোগীরা গর্ভপাত নষ্ট করার জন্য বারবার চাপ সৃষ্টি করে। এজাহারে আরও বলা হয়, চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর গর্ভের বয়স প্রায় চার মাস হলে প্রতিবেশী মাজিদা বেগমসহ কয়েকজন মিলে তাকে জোর করে হারাগাছ মেরী স্টপ ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখানে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওষুধ প্রয়োগ করে জোরপূর্বক গর্ভপাত নষ্ঠ করানো হয়।
বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ১৫ সেপ্টেম্বর রাতেই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। অভিযোগ অনুযায়ী, অভিযুক্তদের একটি দল আছিয়াকে অপহরণ করে লালমনিরহাটে আরিফুল হকের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে দেশীয় অস্ত্রের মুখে ওলিউল্ল্যাহ ওরফে (চিকা) নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তাকে বিয়ে পড়ানো হয়। প্রায় ৪৫ দিন তাকে বন্দি রেখে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। পরে সুযোগ পেয়ে তিনি পালিয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন।
এদিকে স্বাস্থ্যকর্মী মাজিদা বেগম জানান, হাসেন আলীর নির্দেশে শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) তিনি আছিয়াকে মেরী স্টপ ক্লিনিকে নিয়ে গেলে আনোয়ারা নামে ম্যাডাম দুই ধরনের ওষুধ লেখেন। ওই ওষুধ সেবনের পর শুক্রবার রাতেই আছিয়ার গর্ভপাত নষ্ট হয় এবং পরদিন শনিবার সকালে তার রক্তক্ষরণ শুরু হয়। পরে আনোয়ার ম্যাডামকে ফোন করে ক্লিনিকে নিয়ে গেলে চিকিৎসক আয়রন ও ভিটামিন ট্যাবলেট দেন। মাজিদার দাবি, ঘটনার কাগজপত্র আছিয়ার আত্মীয়দের কাছে দেওয়ায় হাসেন আলীর স্ত্রী তাকে তার স্বামীর ক্ষতির হুমকি দেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মইনুল ইসলাম ও মমিন বলেন, “স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে হাসেন আলী আছিয়াকে নির্যাতন করে আসছিল। গর্ভবতী হওয়ার পর জোর করে সন্তান নষ্ট করেছে। আমরা দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
হারাগাছ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজাদ রহমান বলেন, “এজাহারটি গ্রহণ করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”


