গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অতিরিক্ত ৬০ হাজার রিজার্ভ সেনা ডাকার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। পাশাপাশি আরও ২০ হাজার সেনার দায়িত্বের মেয়াদ বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
বুধবার (২০ আগস্ট) ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নতুন সামরিক অভিযান চালানোর অনুমোদন দিয়েছেন। এর অংশ হিসেবে ধাপে ধাপে ‘সুনির্দিষ্ট ও লক্ষ্যভিত্তিক’ অভিযান পরিচালনা করা হবে। ইতোমধ্যে জেইতুন ও জাবালিয়া এলাকায় অভিযান শুরু হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, এই অভিযানের ফলে গাজায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। উপত্যকার অধিকাংশ মানুষ বারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, বহু এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং দুর্ভিক্ষের হুমকিতে অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
আল-জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম জানিয়েছেন, গাজা সিটির বাসিন্দারা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শহরের পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে ঘরবাড়ি একের পর এক ধ্বংস হচ্ছে। দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি এলাকায় এক পিতা বোমা হামলায় সন্তানদের হারিয়েছেন—যে স্থানটিকে ইসরায়েল আগে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ ঘোষণা করেছিল।
শুধু বুধবারের হামলাতেই অন্তত ৩৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১০ জন খাদ্য সহায়তা সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারান।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই কাতার ও মিশরের নেতৃত্বে, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে যুদ্ধবিরতির নতুন উদ্যোগ চলছে। প্রস্তাবিত কাঠামোয় রয়েছে ৬০ দিনের অস্ত্রবিরতি, ধাপে ধাপে জিম্মি ও বন্দি বিনিময় এবং মানবিক সহায়তা প্রবাহ বৃদ্ধির পরিকল্পনা। তবে ইসরায়েলের সিদ্ধান্ত এখনও জানা যায়নি। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এর আগে শর্ত দিয়েছিলেন—সব বন্দিকে একসঙ্গে মুক্তি দিতে হবে এবং যুদ্ধ শেষ করতে হবে।
অন্যদিকে, হামাস নেতা মাহমুদ মারদাউই বলেন, “আমরা সমঝোতার দরজা উন্মুক্ত করেছি। এখন প্রশ্ন হলো নেতানিয়াহু আবারও তা বন্ধ করবেন কি না।”
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬২ হাজার ৬৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ। জাতিসংঘ এই পরিসংখ্যানকে বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।


