রম্য লেখক, আমিনুল হকঃ
প্রেম-ভালোবাসা মানুষের সহজাত গুনগুলোর একটি। প্রেম ভালোবাসা আছে বলেই ধরিত্রী এত সুন্দর । এ প্রেম-ভালোবাসা শুধু যে, মানুষে মানুষে হতে হবে, এমন নয় । প্রকৃতি ,পাহাড় ,পর্বত, সাগর ঝর্না, নদীর সাথেও প্রেম ভালোবাসার এক অপূর্ব বন্ধন রচিত হতে পারে। এ রকম নদীর সাথে ভালোবাসা, সখ্যতায় গড়ে উঠেছে সারিয়াকানদির “প্রেম-যমুনার ঘাট।”
সারিয়াকানদি হল বগুড়া জেলার যমুনা বিধৌত এক উপজেলা । জেলা শহর হতে মাত্র ২২ কিলোমিটার দূর। যমুনার ভাঙ্গনে তিলে তিলে নি:শেষ হয়ে যাওয়া সারিয়াকানদিবাসীর জীবন দুঃখ-কষ্টে ভরা। প্রেম ভালোবাসা দিয়ে তাদের জীবন গড়া! সে তো “অমাবস্যার চাঁদ ।” যমুনায় ভাঙ্গা গড়া তাদের প্রতি বছরের নিয়তির খেলা।
সারিয়াকানদিবাসীর এ ভাঙ্গা গড়া খেলার কিঞ্চিত অবসান ঘটে ২০০০ সালে। এ সালে সরকারের সহায়তায় নির্মান করা হয়েছে “গ্রোয়েন বাঁধ” । এ বাঁধ সারিয়াকানদিকে যমুনার ভাঙ্গন থেকে সুরক্ষা দিয়েছে। আবার এ বাঁধ এনে দিয়েছে নদী ও প্রতিকৃতির এক মনোমুগ্ধকর মনোরম সৌন্দর্য । প্রাকৃতিক এ সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েই গড়ে উঠেছে সারিয়াকানদির “প্রেম -যমুনার ঘাট ।”
এ কারনে প্রতিদিন হাজারো পরিবার-পরিজন, কপোত- কপোতী, প্রেমিক যুগল ছুটে আসেন। ভিড় জমান এ “প্রেম- যমুনা ঘাটে ।” তারা প্রেমের জয়গান করেন। এ ঘাটের চারপাশে যমুনার অথৈ পানি, দূরে চর জাগা ভূমিতে সবুজ ছন, কাইশার সমারোহ, আকাশে বালিহাঁস, সাদা বকের ওড়াউড়ি সত্যি যেন মনে “প্রেমের” স্পন্দন জোগায়। প্রেমিক যুগলদের মনে করে দেয় নীনা হামিদ ও আবদুল আলীমের দ্বৈত কন্ঠের সেই কালজয়ী গান” সাঁঝের বেলা আইসা ঘাটে রে /পায়ের নুপুর খইসা যায় / হে নাগর ছেড়ে কলসি আমার যায় বেলা।”
প্রেম যমুনার ঘাট ছাড়াও আরও ঘাট রয়েছে । তা হল- দিঘলকানদি, দেবডাঙগা, কালিতলা, শিমুলতলা। এ সকল ঘাট ও স্পারগুলো বেশ দৃষ্টিনন্দন । সেখানেও দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে থাকে বছরজুড়ে।
এক ঘেয়েমি কর্ম জীবনে একটু মুক্ত হাওয়া খাওয়া আর প্রান ভরে নি:শ্বাস নেওয়াটাও জরুরি । এতে কর্ম স্পৃহা জাগ্রত হয় । এ জন্য কিছু মানুষ পরিবার পরিজন, প্রেমিক যুগল ছুটে যান যমুনার তীরে “প্রেম যমুনার ঘাটে।”


