সাগর মিয়া, রংপুরঃ
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রংপুর-৩ (সদর) আসনে রাজনৈতিক উত্তাপ দ্রুত বাড়ছে। জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে দীর্ঘদিন পরিচিত এই আসনে বিএনপি–জামায়াতও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে অবস্থান করছে। এ ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যেই গণঅধিকার পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে আশরাফুল আলম আশরাফকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে, যা নির্বাচন ঘিরে আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে শহুরে ভোটার, তরুণ ভোট, পেশাজীবী শ্রেণি ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী—এই চারটি ভোটব্যাংক সবসময় ফলাফলের ওপর বড় প্রভাব ফেলে। প্রার্থী ঘোষণার পরই আশরাফুল আলম আশরাফের আলোচিত প্রতিশ্রুতি এসেছে রংপুর শহরের শতবর্ষী শ্যামাসুন্দরী খাল পুনরুদ্ধার নিয়ে। দখল, দূষণ ও দীর্ঘ অবহেলায় মৃতপ্রায় এই খালকে আধুনিকভাবে পুনঃখনন, দখলমুক্তকরণ, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, সৌন্দর্যবর্ধন ও ড্রেনেজ উন্নয়নের মাধ্যমে পুনর্জীবিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেছেন—“আমি নির্বাচিত হলে শ্যামাসুন্দরী খাল হবে প্রথম প্রজেক্ট।”
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাল পুনরুদ্ধার হলে শহরের জলাবদ্ধতা ৬০–৭০ শতাংশ কমবে, জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাস পাবে এবং নগর সবুজায়নের নতুন পথ খুলবে। রংপুর শহরের অপরিকল্পিত নগরায়ন ও ভেঙে পড়া অবকাঠামো নিয়ে যে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ রয়েছে, সেটিকে ভিত্তি করেই আশরাফুল আলম আশরাফ ঘোষণা দিয়েছেন পরিকল্পিত নগরায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা। আধুনিক ড্রেনেজ, পরিচ্ছন্ন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, গুরুত্বপূর্ণ সড়কে স্ট্রিটলাইট পুনঃপ্রতিষ্ঠা, পথচারীবান্ধব ফুটপাত, প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিউনিটি পার্ক এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল মনিটরিং—এসবকে তিনি রংপুরকে ‘পরিকল্পিত, আলোকিত ও সুশৃঙ্খল শহর’ গড়ে তোলার অপরিহার্য ধাপ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
ধাপ, মেডিকেল মোড়, সেনপাড়া, কামালকাছনা, শালবন, সাথমাথাসহ বহু এলাকার দীর্ঘদিনের সড়ক দুরবস্থার প্রসঙ্গে তিনি বলেন—“রাস্তা শুধু বানানো উন্নয়ন নয়; মান, রক্ষণাবেক্ষণ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করাই আসল উন্নয়ন। নিম্নমানের কাজ হলে যে কোনো ঠিকাদারের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সমাজের বঞ্চিত জনগোষ্ঠী হিজড়া সম্প্রদায়ের উন্নয়নেও তিনি দিয়েছেন আলাদা পরিকল্পনা। দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রকল্প, সরকারি-বেসরকারি খাতে চাকরির কোটা এবং সামাজিক–সাংস্কৃতিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে তাদেরকে মর্যাদার সঙ্গে জীবিকা নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছেন। তার ভাষায়—“হিজড়া সম্প্রদায়কে সম্মানের সঙ্গে বাঁচার সুযোগ দিতে হবে; তাদের উন্নয়ন সমাজেরই উপকার বয়ে আনবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাস্তব সমস্যার সমাধানভিত্তিক যে পরিকল্পনা ও ভিশন আশরাফুল আলম আশরাফ প্রচারণার মাঠে তুলে ধরছেন, তা ভোটারদের কাছে ইতিবাচক সাড়া ফেলতে পারে এবং রংপুর-৩ আসনের প্রচলিত ভোট-সমীকরণেও পরিবর্তন আনতে সক্ষম। মনোনয়ন পাওয়ার পর লিখিত প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন—“আমি রাজনীতি করি মানুষের জীবনমান বদলানোর জন্য। রংপুর-৩ কে একটি আধুনিক, পরিচ্ছন্ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক মডেল নির্বাচনী এলাকায় পরিণত করাই আমার লক্ষ্য।”


