রম্য লেখক, আমিনুল হকঃ
ভোরের আলোয় বিল-ঝিলের সৌন্দর্য বেশ মনোরম অনুভূতির ছোঁয়া দেয়। যদিও বিলের সৌন্দর্য বিলই। তবে বিস্তীর্ণ বিল-ঝিলে গোলাপি শাপলার সারি যেন জলের উপর বিছানো ফুলের কার্পেট। তার মাঝে কচুরিপানার ভেলায় ভাসছে ভাহুক- কালো ধূসর গায়ে, লালচে পা তুলে কখনও জলের উপর হেঁটে বেড়ায়, আবার কখনও শাপলা পাতার আড়ালে হারিয়ে যায়।
ভ গ্রামবাংলার জলাভূমি অঞ্চলে ডাহুক পাখির দেখা মিলে সারা বছর। এদের স্বভাব একটু লাজুক, তবে নিজের এলাকায় দারুন রক্ষণশীল। প্রজনন মৌসুমে ডাহুক দম্পতি তৈরি করে বাসা।
বাসা সাধারণ কচুরিপানার উপর ভাসমান হয়ে থাকে। পানির ঢেউ বা হাওয়ায় দুললেও সেই বাসা থাকে স্থিরভাবে। তিন থেকে চারটি ডিম দেয় মা ডাহুক। আর ডিমে তা দেয়ার কাজ দু’জনেই ভাগ করে নেয়।
শাপলা গোলাপী রঙের মাঝে যখন ডাহুকের ডাক ভেসে আসে- ” ডাহুক” “ডাহুক—” তখন মনে হয় প্রতিকৃতি যেন নিজেই গান গাইছে।
ছানা ডাহুকেরা শাপলার পাতায় খেলা করে, মা দূর থেকে ডাকে, বাবা খাদ্য জোগাড়ে ব্যস্ত থাকে।
ডাহুক কেবল প্রতিকৃতির শোভা নয়। জলজ পরিবেশের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এরা ছোট মাছ, পোকামাকড়, শামুক খেয়ে বিল-ঝিলের জীববৈচিত্র ও ভারসাম্য রক্ষা করে।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, জলাভূমি ভরাট, কীটনাশকের ব্যবহারসহ নানা কারনে ডাহুক দিন দিন কমে যাচ্ছে। যে বিলে এক সময় শত শত ডাহুক দেখ যেত, আজ সেখানে দেখা যায় হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র।
বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ও উন্নয়নকর্মী মো: শহিদুল ইসলামের মতে, জলাভূমি সংরক্ষণ না করলে শুধু ডাহুক নয়, বিলভরা শাপলাও হারিয়ে যাবে।
বিলের জলে গোলাপী শাপলার ফাঁকে কচুরিপানার উপর ডাহুকের বাসা- এই একটিমাত্র ছবিই বলে দেয়, প্রতিকৃতি এখনো আমাদের সঙ্গে কথা বলে। শুধু প্রয়োজন একটু সচেতনতা, একটু মমতা।


