রম্য লেখক, আমিনুল হকঃ
সোনাহাট বাজারের বিকেল মানেই এক পরিচিত দৃশ্য—চোখে চশমাবিহীন, হাতে স্ক্রুড্রাইভার আর কিছু পুরনো সরঞ্জাম। দোকান নেই, তবু তার চারপাশে ভিড় লেগে থাকে সারাক্ষণ। তিনি শামসুদ্দিন, বয়স সত্তর। পেশা—টর্চ, তালাচাবি ও গ্যাস লাইট ঠিক করা। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে এই কাজই তার জীবনের অবলম্বন।
যখন বাজারে ইলেকট্রনিক্স দোকান ছিল না, ব্যাটারি টর্চই ছিল গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা। সেই সময় থেকেই শুরু শামসুদ্দিনের পথচলা। তখন তিনি ছিলেন টগবগে যুবক। ভুরুঙ্গামারীর ওস্তাদ আবদুল কাদেরের কাছ থেকে শিখেছিলেন এই কাজ। “ওস্তাদ কাদের ভাই বলতেন, কাজে মন দিলে হাত নিজেই শিখে নেয়। তার কাছ থেকেই সব শিখেছি,” বললেন শামসুদ্দিন এক চিলতে হাসি দিয়ে।
সোনাহাট বাজারের মাছপট্টির পাকা মেঝেতে বসেই তার কর্মযজ্ঞ। প্রতিদিন বিকেলে বাজারে আসেন তিনি। কারও টর্চ জলে না, কারও তালা অচল—সব সমস্যার সমাধান যেন তার হাতেই লুকানো। বাজারের মানুষও তাই নিশ্চিন্তে বলেন, “ওস্তাদ আছে, চিন্তা নেই।”
তবু জীবনে আরাম নেই। নিজের কোনো জমিজমা নেই তার। ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বরতা ভর্তছড়া গ্রামে ছোট এক ভাঙাচোরা ঘরে স্ত্রী সুফিয়া বিবি ও চার মেয়ে নিয়ে তার সংসার। মেয়েরা সবাই বিবাহিতা, কিন্তু বাবার প্রতি টান আজও অটুট।
সময় বদলেছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, হাতে হাতে মোবাইলের আলো—টর্চের যুগ প্রায় শেষ। তবু সোনাহাট বাজারের এক কোণে এখনো দেখা মেলে সেই চিরচেনা মানুষটির।
সন্ধ্যার পর যখন বাজারের আলো নিভে আসে, তখনও শামসুদ্দিনের হাতে টর্চ জ্বলে। তিনি মৃদু হেসে বলেন, “কাজই আমার আলো।”


